ছোটদের কথা
ছোটদের কথা
RNI No. 24555/72
জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য
ড ঝর্ণা বর্মন
দেবাশিস মোহান্তি
মুদ্রিত পত্রিকা মূল্য ১৫ টাকা
e-mail: chhotoder katha.2008@gmail.com
Mob.: 9434197006/9382189026
Blog : http//chhotoderkatha.blogspot.com
পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষা অধিকর্তা কর্তৃক অনুমোদিত সাময়িক পত্রিকার তালিকাভূক্ত বিজ্ঞপ্তি নং - ১১১৪(১০)/১(১০) টি.বি.সি. তাং কলিঃ ৩১.০৮.৮৯
ছোটদের কথার যাত্রা শুরু ১৯৭২ সালে আগষ্ট মাসে ছোটদের জন্য ছোটদের জগৎ নামে সংকলন প্রকাশের মাধ্যমে। সম্পাদক ও প্রকাশক কল্পনা সুর, ২ সাহচেতন রোড, ময়ূরমহল, বর্ধমান
মূল্য পঞ্চাশ পয়সা।
পত্রিকার সাইজ ১/১৬ ডাবল ক্রাউন
মুদ্রাকর
শ্ৰী পাঁচুগোপাল সিংহ
শ্রীলেখা আর্ট প্রেস
বোরহাট, বর্ধমান
ছোটদের জগৎ
১ম বর্ষ, ১ম সংখ্যা (সংকলন), আগষ্ট ১৯৭২, সম্পাদিকা : কল্পনা সুর
সূচি
আমাদের কথা......সম্পাদিকা
বাসনা (কবিতা)......দীনবন্ধু ভট্টাচাৰ্য্য
অংক (কবিতা)......পার্থসারথি চৌধুরী
নেকী (কবিতা)......অচিন্ত্য শুভ্র মিত্র
আজব দেশ (কবিতা)......মিনতি নাথ
একটি লুসাই রূপকথা......শোভনপাল চট্টোপাধ্যায়
এক স্বার্থপর দৈত্য......অস্কার ওয়াইল্ড : অনুবাদ নীরেন চৌধুরী
একটি লাফ......রঞ্জন রায়
সেন্সাস —১৯৭১......সেখ মণি
রাশিয়ার অভিজ্ঞতা......দীপ্তিকুমার ঘোষ
সংখ্যা লিখন পদ্ধতি— দশমিক পদ্ধতি ও দুই গুণাত্মক (binary) পদ্ধতি......অমিয়কুমার ব্যানার্জী
করে দেখ/বলতে পার?......হাসি হালদার
খেলাধূলার আসর......ক্রীড়া সাংবাদিক
অলিম্পিকের টুকিটাকি ......বিমান রায়
ধাঁধা ও কথার প্রাসাদ......মিঠু চট্টোপাধ্যায়
সংবাদ চয়নিকা......সাংবাদিক
একটি লাফ গল্পের ছবি দু’টি এ, পাখোতভ এর অনুকরণে স্কেচ করেছে নবম শ্রেণীর ছাত্র সন্টু রায়।
- - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - -
বিজ্ঞাপন
গৌতম জুয়েলার্স
৬৮, শ্যামবাজার, বর্দ্ধমান
প্রোঃ-শ্রীবীরেন্দ্রনাথ রায়
পুরাতন গহনা ভাঙ্গিয়া নিত্য নূতন ডিজাইনের গহনা প্রস্তুত করা হয় ও অল্প সময়ের মধ্যে গ্যারান্টিসহ ডেলিভারী দেওয়া হয়।
- - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - -
ছোটদের জগৎ—ছোট ছোট ভাই বোনেরাই এর প্রেরণা। ছোট্ট বন্ধুদের বিচিত্র প্রতিভার বিকাশ এর উদ্দেশ্য। পরীক্ষাটি দুরূহ। কিন্তু আন্তরিকতা থাকলে কোন কাজই অসম্ভব নয়, সে যত কঠিনই হোক না কেন। তাই শিশু মনের স্বচ্ছন্দ বিকাশ সাধনে নিরলস প্রচেষ্টা চালাবার শপথ নিয়েই ছোটদের জগৎ আত্মপ্রকাশ করতে চায়।
আমাদের এই প্রচেষ্টায় অগণিত ছোট ছোট বন্ধু ও তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে উপযুক্ত সাড়া ও সাহায্য পাব এ বিশ্বাস নিয়েই যাত্রা শুরু করছি। তাদের ভালবাসা এবং শুভেচ্ছা আমাদের পাথেয় হোক।
“এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি—
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
অবশেষে সব কাজ সেরে,
আমার দেহের রক্তে নতুন শিশুকে
করে যাব আশীর্বাদ
তারপর হব ইতিহাস।”
- - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - -
পাঠক পাঠিকাদের অবগতির জন্য জানান হচ্ছে যে রেজিষ্ট্রেশনের জন্য ‘ছোটদের জগৎ’ টাইটেল না পাওয়ায় এই নাম পরিবর্তন করতে হয়েছে। রেজিষ্ট্রেশনের নাম অনুযায়ী আগামী সংখ্যা থেকে এই পত্রিকার নাম হবে ‘ছোটদের কথা’। অতএব এখন থেকে যাবতীয় যোগাযোগ নীচের ঠিকানায় করতে হবে।
সম্পাদিকা
ছোটদের কথা
২, সাহচেতন রোড, ময়ূরমহল
বর্ধমান
- - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - -
আমাদের কথা
দেওয়ালী / মিত্রা বসু
দুষ্টবুদ্ধি রাজা / ধীরেন্দ্রলাল ধর
পূজো, পূজো / বারীণ বসু
ওস্তাদি / রেবন্ত গোস্বামী
খেলেই মরবে / দীনবন্ধু ভট্টাচাৰ্য
কালো-ভালোর গল্প / কালীপদ সিংহ
শিখর গড়ের সিংহ / পার্থপ্রতিম চট্টোপাধ্যায়
ঠাকুরমা গল্প বলেন / সুনীল কোণার
ছোটদের কথা / সুদীপা সিংহ
তকাই / অবি সরকার
খোকন সোনা / শুচিশ্মিতা ঘোষ
আমাদের বিড়াল পুষি/লাভলী
নারায়ণ গাঙ্গুলী স্মরণে / পার্থ চৌধুরী
সাধ / রাহুল দাশগুপ্ত
হিজিবিজি / সাহানা হুদা
অ্যাণ্ড্রিয়া ভেসালিয়াস / রঞ্জন রায়
রাজা রামমোহন রায় / সোমনাথ চৌধুরী
বিদ্রোহী ভারত / কথা ভারত পথিক, চিত্র অবি সরকার
জীব জগতের আলো / সুনীল সাঁই
করে দেখো / ভক্তিপদ সিংহ
যে সময়ে যা / রথীন্দ্রনাথ ভট্টাচাৰ্য
খেলাধূলা সংবাদ / ক্রীড়া সাংবাদিক
ধাঁধা ও কথার প্রাসাদ / মিঠু চট্টোপাধ্যায়
সংবাদ চয়নিকা/সাংবাদিক
- - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - -
বিজ্ঞাপন
আমার দেশের রূপকথা : ১.৫০
দেশ বিদেশের রূপকথা : ৩০০
ক্যালকাটা পাবলিশার্স
১৪, রমানাথ মজুমদার ষ্ট্রীট, কলিকাতা-৯
- - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - -
ছোটদের কথা
মূল্য-পঞ্চাশ পয়সা মাত্র
ছোটদের সচিত্র মাসিক পত্রিকা
ছোটদের কথা : সম্পাদনা-কল্পনা সুর
(১) নভেম্বর থেকে প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হবে। সাধারণত প্রতি মাসের প্রথম সপ্তাহে
পত্রিকা প্রকাশিত হবে। শারদীয়া বিশেষ সংখ্যা প্রকাশিত হবে মহালয়ার পূর্বে। সাধারণ সংখ্যাগুলির প্রতি কপির মূল্য পঞ্চাশ পয়সা এবং বিশেষ সংখ্যা আনুমানিক দুই টাকা।
(২) গ্রাহক চাঁদা বাৰ্ষিক ছয় টাকা। গ্রাহকদের বিশেষ সংখ্যার জন্য অতিরিক্ত মূল্য দিতে হবে না। গ্রাহকদের ডাক ব্যয় দিতে হবে না।
(৩) এক বছরের কম গ্রাহক হওয়া যাবে না। যে কোন সংখ্যা থেকে গ্রাহক হওয়া যাবে।
(৪) পত্রিকা কর্তৃক আহুত প্রতিযোগিতায় একমাত্র গ্রাহক গ্রাহিকারাই অংশ নিতে পারবেন।
(৫) সাধারণ ও বিশেষ সংখ্যায় গ্রাহক-গ্রাহিকাদের লেখা অগ্রাধিকার পাবে।
(৬) গ্রাহকচাঁদা অগ্রিম একসঙ্গে জমা দিতে হবে ।
(৭) সম্ভাব্য গ্রাহক-গ্রাহিকাদের কোন আবেদন পত্র পূরণ করতে হবে না। মানি অর্ডার করে চাঁদা পাঠালে মানি অর্ডার কূপনে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে— গ্রাহকের নাম, বয়স, অভিভাবকের নাম, ঠিকানা, পত্রিকা কিভাবে (হাতে, না ডাকে) সংগ্রহ করতে চান।
(৮) চাঁদার টাকা (রবিবার বাদে) যে কোনদিন বেলা বারোটা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে কার্যালয়ে এসে জমা দেওয়া যাবে। সঙ্গে সঙ্গে অবশ্যই চাঁদার রসিদ নিতে হবে।
(৯) পত্রিকার জন্য সমস্ত রচনা ও চিঠিপত্র সম্পাদিকার নামে নীচের ঠিকানায় পাঠাতে হবে।
(১০) গ্রাহক-গ্রাহিকারা রচনা, ধাঁধা, প্রতিযোগিতার উত্তর ইত্যাদি পাঠাবার সময় গ্রাহক নম্বর, নাম, ঠিকানা ও বয়স স্পষ্ট করে লিখে পাঠাবেন ।
(১১) রচনা মনোনয়নের ব্যাপারে সম্পাদক মণ্ডলীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
(১২) রচনা সাদা ফুলস্কেপ কাগজের এক পৃষ্ঠায় লিখতে হবে। অমনোনীত লেখা ফেরৎ পেতে হলে উপযুক্ত ডাক টিকিট সঙ্গে পাঠাতে হবে।
(১৩) পাঁচ কপির কমে এজেন্সী দেওয়া হবে না। এজেন্সী জমা দুই টাকা পূর্বে পাঠিয়ে
নাম তালিকাভুক্ত করতে হবে।
(১৪) এজেন্টদের শতকরা পঁচিশ টাকা হারে কমিশন দেওয়া হবে।
(১৫) কমিশন বাদ দিয়ে ভি, পি, করে পত্রিকা পাঠান হবে। ডাক ব্যয় এজেণ্টদের দিতে হবে না।
(১৬) অন্যান্য জ্ঞাতব্য বিষয় পত্র দ্বারা জেনে নেবেন ।
ছোটদের কথা কার্যালয়
২, সাহচেতন রোড, ময়ূরমহল, বর্ধমান
কল্পনাসুর ২, সাহচেতন রোড, ময়ূরমহল বর্ধমান হইতে প্রকাশিত এবং শ্রীলেখা আর্ট প্রেস, বর্ধমান হইতে মুদ্রিত।
- - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - -
২৫শে নভেম্বর, ১৯৭২, শনিবার, কলকাতা-১০
স্নেহের ভাইবোন,
আমাদের সম্পাদকীয় দপ্তরে নানা ধরণের পত্র-পত্রিকা প্রায়ই এসে থাকে। এ সবের মধ্যে ছোটদের পত্র-পত্রিকার সংখ্যাও বড় একটা কম নয়। এই পত্রিকাগুলির মধ্যে আছে সাপ্তাহিক পাক্ষিক, মাসিক, ত্রৈমাসিক এবং বার্ষিক। কিন্তু একটা ব্যাপার কি জান? ছোটদের এইসব পত্রিকার মধ্যে কিছু কিছু ভাল কাগজ অবশ্যই আছে—তাতে কোন সন্দেহই নেই। কিন্তু বেশীর ভাগ পত্রিকার সম্পাদনাই ত্রুটিপূর্ণ এবং নির্বাচিত লেখাগুলি খুব নীচুমানের। ছোটদের আনন্দ দেবার এই প্রচেষ্টাকে ছোট করে দেখা নিশ্চয়ই ঠিক হবে না। কিন্তু, ছোটদের নির্মল আনন্দদানের মাধ্যমেই গল্প, গাথা, ইতিহাস এবং জ্ঞানবিজ্ঞান সম্পর্কে শিক্ষণীয় নানা কথা সহজ করে তাদের কাছে পরিবেশন করতে হবে। কি বল, তাই নয় কি?
কিছুদিন হল, ছোটদের একটি মাসিক পত্রিকার প্রথম বর্ষের প্রথম সংখ্যা (নভেম্বর, ১৯৭২) আমাদের হাতে এসেছে। পত্রিকাটির নাম ‘ছোটদের কথা’–সম্পাদিকা শ্রীমতী কল্পনা সুর। প্রতি সংখ্যার দাম, আট আনা, বার্ষিক চাঁদা–ছয় টাকা। ২ নম্বর সাহচেতন রোড, ময়ূরমহল, বর্ধমান–‘ছোটদের কথা’ কার্যালয় থেকে প্রকাশিত হচ্ছে। এই পত্রিকার লেখাগুলি সুনির্বাচিত এবং ছোটদের পক্ষে খুবই শিক্ষনীয়। বিদ্রোহী ভারত নাম দিয়ে একটি সুন্দর এবং শিক্ষণীয় ক্রমশঃ কার্টুন এবং তকাই নামে আর একটি হাসির কার্টুন প্রকাশিত হচ্ছে। মফস্বল শহরের ছোটদের একটি পত্রিকা হলেও কলকাতা শহরের নামকরা ছোটদের পত্রিকার সঙ্গে সমান তালে চলার দাবি রাখে। এই ছোটদের পত্রিকা থেকে তোমাদের ‘দেওয়ালী’ নামে একটি ছড়া উপহার দিলাম। তোমরা পড়ে দেবে। এটি লিখেছেন শ্রীমতী মিত্রা বসু। আজ এখানেই শেষ করলাম। তোমরা আমার প্রীতি ও শুভেচ্ছা নিও।
ইতি— তোমাদের মাস্টারদা
১ম বর্ষ, ২য় সংখ্যা, ডিসেম্বর ১৯৭২
- - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - -
[এই প্রবন্ধে লেখক অধ্যাপক রামকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় ছোটদের কথা’র জন্মলগ্ন থেকেই ‘ছোটদের কথা’র সঙ্গে জড়িত এবং সম্পাদক মওলীর প্রবীণতম সদস্য। তিনি ‘বর্ধমান রাজকলেজের বাংলাভাষার অধ্যাপক। মনীষী জীবন কথা, প্রশ্নোত্তর, নয়া পড়ুয়াদের জন্য ‘সরল পাঠ’, ‘চলো যাই’ নামে দেশবিদেশের কাহিনী ও বিভিন্ন স্বাদের গল্প, নাটিকা প্রভৃতির দ্বারা তিনি নিয়মিত ছোটদের কথা’কে সমৃদ্ধ করেছেন। এবং এখনও তিনি তার কলম ছোটদের কথার জন্য সবসময়ই প্রস্তুত রেখেছেন। আগামী সংখ্যাগুলিতেও পাঠক-পাঠিকারা তাঁর কাছ থেকে অনেক কিছু পাবে]।
মফঃস্বল শহর থেকে একটি পত্রিকা বেরুচ্ছে— উঠতি লেখকদের মুখপত্র নয়। হাত খরচের পয়সা বাঁচিয়ে ট্যুইশনি করে আত্মপ্রকাশের জন্য মরশুমী ব্যাকুলতা নয়। অনেক ভেবেচিন্তে, অনেক অংক কষে, লাভের ঘর শূন্য জেনেও একজন বয়স্ক লোক একটি পত্রিকা প্রকাশ করছেন। একদিন দুদিন নয় সাতটি বছর ধরে। মেয়ের বাহারি জামা হবে না, শিশুপুত্রের বেবিফুডে টান পড়বে সবকিছু মেনে নিয়ে। পত্রিকাটি নিজের কিংবা আত্মজনের প্রচারের জন্যে নয়, ছোটদের জন্যে—শিশু ও কিশোরদের জন্যে। স্বভাবতই কৌতূহল ছিল। পত্রিকার জন্মলগ্নে সহযোগী বন্ধুরা হাল্কাভাবে বলেছিলেন যে আমাকে একদিন ছোটদের কথা’র ইতিহাস লিখতে হবে। এই প্রবন্ধ যদিও কোন বর্ণাঢ্য ইতিহাস নয় তবু যে আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও ছোটদের প্রতি মমত্ববোধ লক্ষ্য করেছি এই সাতবছর তার স্মৃতিচারণ বোধহয় অপ্রাসঙ্গিক হবেনা। তাই...সসঙ্কোচেই পত্রিকার কর্ণধারের মূল্যবান সময়ের একটুখানি চাইলাম।
তিনি অবশ্য পত্রিকার সম্পাদিকা কল্পনা সুর নন। সম্পাদিকা অন্তরালেই থাকেন। পত্রিকার ভালমন্দ সবকিছুর দায়দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন তাঁর একান্ত সচিব ও সখা ধীরেন্দ্রনাথ সুরের ওপর। ধীরেন্দ্রনাথ বৰ্দ্ধমান পলিটেকনিকে শিক্ষকতা করেন। অত্যন্ত কাজের লোক। নিখুঁত হিসেব করে কাজ করাই তার ধর্ম। আর সেই ধর্মপালন করতে শিশু ও কিশোরদের টানে লোকসানের আসরে বহরটার কড়াক্রান্তি হিসেব করেই নামলেন। কি?— না— ছোটদের জন্যে পত্রিকা বের করবেন। পত্রিকার উদ্দেশ্য পত্রিকার নিজের ভাষায় বলিঃ
“ছোটদের জগৎ— ছোট ছোট ভাইবোনেরাই এর প্রেরণা। ছোট্ট বন্ধুদের বিচিত্র প্রতিভার বিকাশ—এর উদ্দেশ্য। পরীক্ষাটি দুরূহ। কিন্তু আন্তরিকতা থাকলে কোন কাজই অসম্ভব নয়— সে যত কঠিনই হোক না কেন। তাই শিশুমনের স্বচ্ছন্দ বিকাশ সাধনে নিরলস প্রচেষ্টা চালাবার শপথ নিয়েই ছোটদের জগৎ আত্মপ্রকাশ করতে চায়।”
হ্যাঁ। ছোটদের জগৎ-এর উত্তরাধিকার নিয়েই ‘ছোটদের কথা’র আবির্ভাব।
১৯৭২ সালের আগষ্ট মাসে ‘ছোটদের জগৎ’-এর প্রথম সংকলন প্রকাশিত হয়। ডবল ক্রাউন ১/১৬ আকারে।
- - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - -
সন্ধ্যেবেলায় প্রদীপ জ্বালাবার আগে সকালবেলায় সলতে পাকান। অতএব সলতে পাকাবার কথায় আসি।
ধীরেনবাবুকে বললাম, ‘প্রস্তুতি পর্বের কথা একটু শোনান’।
ধীরেনবাবু শুরু করলেন, “মাথায় পত্রিকার ভূত ১৯৭২ জুন মাসে পত্রিকার জন্যে সরকারের অনুমোদন চাইলাম। সঙ্গে সঙ্গে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পত্রিকা প্রকাশের জন্য ছুটোছুটি সুরু করলাম।”
এই ছোটাছুটির ফলে তিনি অনেককে সহযোগী পেলেন৷ তাঁদের মধ্যে বিশেষ করে পেলেন শিল্পী অবি সরকারকে। ‘কে এই অবি সরকার?
অবি সরকার সরকারী দপ্তরে কাজ করেন। দপ্তরে তিনি আর্টিষ্ট। ধীরেনবাবুর সঙ্গে তাঁর আলাপ আকস্মিকভাবেই। শুধু লেখক দিয়েই তো ছোটদের পত্রিকা চলেনা। তারজন্যে শিল্পী চাই।
সৰ্ব্বপ্রথমে শিল্পীকেই চাই। কেন? প্রচ্ছদপট লাগবে না? মানানসই প্রচ্ছদ না হলে ছোটদের পত্রিকা চলে? ধীরেন্দ্রনাথ অনেকদিন ধরেই চিত্রশিল্পীর খোঁজ করছিলেন। শুধু শিল্পী হলেই চলবে না। মাথায় পোকা থাকা চাই। ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াবার পোকা। অবি শিল্পী, মাথায় পোকা আছে। অতএব প্রচ্ছদের ভাবনাই নয় ছবির ভাবনাও দূর হল। কত ছবি চাই, কতক্ষণে চাই? তুলি কলম নিয়ে অবি তৈরী। ধীরেনবাবু যেমনটি চাইছিলেন ঠিক তেমনটি পেয়েছিলেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অবি এনে দিলেন এক অপূর্ব প্রচ্ছদের লে-আউট।
কিন্তু ছবির ব্লক করার খরচ জুটবে কোত্থেকে? মেটাল ব্লকের অনেক খাঁই। অতএব অবি ছবিতে সূক্ষ্ম কাজ দেখাবার মোহ ছাড়লেন। মোটা হাতের কাজ ধরলেন—লিনো হবে। মেটাল ব্লক একেবারে বর্জ্জন করা হলনা। তার-জন্যে রইল ‘তকাই’। ‘তকাই’—অবির সৃষ্টি এক কৌতূক চরিত্র যা প্রথম আবির্ভাবেই ছোটদের মন কেড়ে নেয়। ধীরেন্দ্রনাথ ‘ভারত পথিক’ নাম। দিয়ে লিখতে লাগলেন ‘বিদ্রোহী ভারত’ আর তার বলিষ্ঠ চিত্ররূপ দিতে লাগলেন অবি সরকার।
তাছাড়া আর একটা কথা। ধীরেন্দ্রনাথ বললেন, “আঁকতে অনেকেই পারেন, অনেকে খুব ভালই পারেন। কিন্তু ছোটদের মনের সঙ্গে যোগ ঘটাবার ক্ষমতা তো সবারই থাকে না। যাঁদের আছে তাঁদের মধ্যে অবি নিশ্চয়ই একজন। আর সেজন্যই তাঁকে পত্রিকার প্রাণপুরুষ বললে বাড়িয়ে বলা হয়না।”
অবির সঙ্গে আর একজনও বেশ প্রবলভাবেই এলেন। তিনি অবশ্য আগে থেকেই ছিলেন। কিন্তু লিনো কাটার সূত্রে তাঁর থাকাটা সকলেরই নজরে পড়ল। তিনি হলেন বর্ধমান রাজকলেজের অধ্যাপক জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য। অধ্যাপকের মননের সঙ্গে শিল্পীর মেজাজ মিলে তাঁকে অনন্য করেছে।
তাছাড়া লেখকরা তো আছেনই। ধীরেন্দ্রনাথ বললেন আমি বললাম, লেখক কিংবা লেখার কথা আপাতত থাক। ও নিয়ে অনেক লেখালেখি করতে হবে—সে সব কথা পরে হবে।
তবু ধীরেনবাবু বলে চললেন, প্রদীপকুমার রায় ও জ্যোতির্ময় দে বিশ্বাসের নামটা করা দরকার। জ্যোতির্ময় কলকাতার লেখকদের মধ্যে ‘ছোটদের কথা’র আবেদনটি পৌঁছে দেয়। তাছাড়া লেখার গুণে আর ছবির জাদুতে ‘ছোটদের কথা’ সহজেই ছোটদের পত্রিকা সমাজে পয়লা সারিতে স্থান করে নেয়। ভূয়সী প্রসংশা পেয়ে স্বল্পকালের মধ্যেই পঃ বঃ শিক্ষা বিভাগের অনুমোদন লাভ করে।”
ছোটদের কথা? কথা তো হচ্ছিল ছোটদের জগৎ নিয়ে। কথায় কথায় আসল কথাটাই বলা হয়নি। এখন, ছোটদের জগৎ’-এর জন্য অনুমোদন চেয়ে সরকারী দপ্তরে আবেদন করা হল। কিন্তু ঐ নামটি পাওয়া গেলনা। পাওয়া গেল ‘ছোটদের কথা’ নামটি। অতএব তাই সই। নামে কি আসে যায়? যে নামেই ডাক না কেন গোলাপ গোলাপই থেকে যায়৷ ফলে নভেম্বর ১৯৭২ থেকে ছোটদের কথার হাঁটি হাঁটি পা পা চলেছে। এ বছর অক্টোবরে তার সাতবছর পূর্ণ হবে। গরীব ঘরের ছেলে। দারিদ্র্যের ছাপটা স্পষ্ট। তবে অযত্নের কোন চিহ্ন নেই। বরং স্বাস্থ্যের দীপ্তিতে সে শ্ৰীমান্।
যাক। পত্রিকার আদিপর্বের কথাই চলুক । বললাম, আর্থিক ব্যাপারটা একটু খুলে বলুন না।
ধীরেনবাবু বললেন, বুঝতেই তো পারছেন, ভাঁড়ে’মা ভবানী । অতএব প্রভিডেন্ট ফাণ্ড থেকে ধার। আমাদের দুজনার মাইনের কিছু অংশ। আর বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে ধার। এ ব্যাপারে অগ্রণী হলেন বর্দ্ধমান রাজকলেজের অধ্যাপক সুধীর রায়, অধ্যাপক ভাস্কর দাশগুপ্ত এবং অধ্যাপক জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য ও অধ্যাপক সুনীল সাঁই। অধ্যাপক গিরীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় এতদিন পর্যন্ত রাজকলেজেই ছিলেন সম্প্রতি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছেন। এ ব্যাপারে তাঁরও সাহায্য পেয়েছি। আর পেয়েছি আমার সহকর্মী বন্ধু অধ্যাপক প্রজেশ চক্রবর্তীর সাহায্য। জীবনবীমা কর্পোরেশনের শ্রীশ্যাম বসুও কম করেননি। তাছাড়া শ্রীলেখা আর্ট প্রেসের কথা না বললেই নয়। পত্রিকা আঁতুড়েই মারা যেত যদি প্রেসের সহযোগিতা না পাওয়া যেত।
জিজ্ঞেস করলাম, কোন সংগঠনের সাহায্য পেয়েছেন?
না, কোন সংগঠনেরই সাহায্য পাইনি। তবে অসংখ্য ব্যক্তির শুভেচ্ছা ও সহযোগিতা পেয়েছি। বর্দ্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্য ব্যানার্জী এবং প্রশান্ত চক্রবর্তী পত্রিকার জন্যে কম করেননি। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডঃ রমারঞ্জন মুখোপাধ্যায় এবং কয়েকজন বিশিষ্ট অধ্যাপক ছোটদের কথার অনুকূলে এক আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করে পত্রিকা প্রচারে বিশেষ সাহায্য করেন। বন্ধুবর দীপ্তিকুমার দত্তের নিকটও অনেক সাহায্য পেয়েছি।
এবার পত্রিকার প্রচার প্রসঙ্গ। ধীরেনবাবু: বললেন, এ ব্যাপারে বন্ধুবান্ধবরা তো ছিলেনই। আর একজন ছিলেন সত্যযুগ পত্রিকার নয়া পাঠশালার পরিচালক মাষ্টারদা অর্থাৎ কিনা হরেন ঘটক মশাই৷ স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে তিনি ছোটদের কথা সম্পর্কে লিখলেন :
“এই পত্রিকার লেখাগুলি সুনির্বাচিত এবং ছোটদের পক্ষে খুবই শিক্ষনীয়। “বিদ্রোহী ভারত” নাম দিয়ে একটি সুন্দর ও শিক্ষনীয় ক্রমশঃ কার্টুন এবং তকাই নামে আর একটি হাসির কার্টুন প্রকাশিত হচ্ছে। মফঃস্বল শহরের ছোটদের একটি পত্রিকা হলেও—কলকাত শহরের নামকরা ছোটদের পত্রিকার সঙ্গে সমান তালে চলার দাবি রাখে।”
“মাষ্টারদার এই অযাচিত প্রশংসাপত্র আমাদের দারুণ ভাবে উৎসাহিত করে,” ধীরেনবাবু বললেন। তাঁর কথায় বোঝা গেল, গ্রাহক সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছিল। আর এই বাড়তির পালে হাওয়া লাগাল বীরভূম স্কুল বোর্ডের আনুকূল্য।
এব্যাপারে জপকালি রায়, বীরভূমের জননেতা ও ধূসর মাটির সম্পাদক অরুণ চৌধুরী এবং ওখানকার তৎকালীন স্কুল পরিদর্শক আশাতীত সাহায্য করেন। এর পরেই, বর্ধমান স্কুল বোর্ডেরও আনুকূল্য পাওয়া গেল—এবং হুগলী বোর্ডেরও। বলা বাহুল্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিক্ষাধিকারের অনুমোদন পাওয়ার ফলেই এই সব আনুকূল্য পাওয়া সম্ভব হয়েছিল।
এ বিষয়ে প্রতিকূলতাও কম জোটেনি। ১৯৭৫ সালে ধীরেনবাবু মুর্শিদাবাদ, ২৪ পরগণা, হাওড়া, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, মেদিনীপুর, বীরভূম এবং মালদা জেলাগুলোয় স্কুল বোর্ডে কম ঘোরেননি। এছাড়া বর্ধমান স্কুলবোর্ড তো বটেই। তবে বর্ধমান, হুগলী এবং বীরভূম ছাড়া অন্য কোথা থেকে কোন সহানুভূতিশীল সাড়া পান নি। তা না পান। ধীরেনবাবু তাতে দমবার পাত্র নন। তিনি তো জানতেনই কলকাতার চটকদার কাগজের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এঁটে ওঠা কত কষ্ট। তবু হাল ছাড়েননি। তাইতেই পত্রিকা আজও জাজ্জ্বল্যমান ভাবেই টিকে আছে।
“আর কোন দিক দিয়ে কোন সাহায্য পেয়েছেন?”
“নিশ্চয়ই।” ধীরেনবাবুর উত্তর।
আর্থিক সাহায্য যাঁরা করেছিলেন, প্রচারের ব্যাপারেও তাঁরা কম খাটেননি। উপরন্তু বিজ্ঞাপন—যা না পেলে কোন কাগজ চালান আগে সম্ভব নয়। স্থানীয় ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা বিজ্ঞাপন দিয়ে কাগজটির প্রকাশ অব্যাহত রাখতে কম করেন নি। পত্রিকার প্রথম জীবনে ক্যালকাটা ক্লথ হাউস, বঙ্গশ্রী বস্ত্রালয়, বেঙ্গল ক্লথ হাউস, বেরিনা, যোগেন্দ্রলাল সাধু, যুগসাহিত্যভবন, অমিয় বিশ্বাস, বিশ্বনাথ ঔষধালয় ও এন, আর, দাস এণ্ড সন্স-এর দান ভুলবার নয়। বিশ্বনাথ ঔষধালয় তো গ্রাহকও জোগাড় করে দিয়েছেন।
আর বড় বড় বিজ্ঞাপন? সে ব্যাপারে পত্রিকা তার নিজের গুণেই কেন্দ্রীয় সরকারের ডিএ ভিপির তালিকা ভুক্ত হয়। কর্তৃপক্ষ পত্রিকার কাগজপত্র দেখে সন্তুষ্ট হন। ফলে নিয়মিত বিজ্ঞাপন আসতে থাকে নভেম্বর ১৯৭৩ থেকে। দেখতে দেখতে নিউজপ্রিন্টের কোটাও জুটে যায়। প্রকাশের খরচ কিছুটা কমে যায়। এই সময় প্রায় অচেনা দিল্লীতে ধীরেনবাবু লোকসভা সদস্য কৃষ্ণচন্দ্র হালদারের সহায়তা পান। সে কথা তিনি ভোলেননি।
এই প্রসঙ্গে রাজ্যসরকারের কথা ওঠে। তৎকালীন সরকারের কোন দাক্ষিণ্য মেলেনি বিজ্ঞাপনের ব্যাপারে। বর্তমানে অবস্থার কিছু পরিবর্তন হয়েছে।
অন্যান্যদের মধ্যে এত লোকের সম্মিলিত চেষ্টা তদুপরি সম্পাদক মণ্ডলীর —যাতে গিরীন্দ্রনাথ, জ্যোতির্ময় এবং ভাস্কর বর্তমান —প্রযত্নে ছোট পত্রিকাটি গুণগ্রাহীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। হরেন ঘটক মহাশয়ের কথা আগেই বলা হয়েছে। এবার আর একজনের কথা বলছি। তিনি কিষণচাঁদ বর্মণ— কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকাশন দপ্তরের বাংলা বিভাগের সম্পাদক। ২য় বর্ষ তৃতীয়-পঞ্চম সংখ্যা হাতে খড়ি সংখ্যা হিসেবে প্রকাশিত পত্রিকাটির সমালোচনা করেন। পত্রিকাটিকে তিনি ‘সন্দেশ’, ‘মৌচাক’ প্রভৃতি পত্রিকার পাশে স্থান দেন। এই সমালোচনা ছোটদের কথার প্রচ্ছদের ছবিসহ ঐ বিভাগের ছোটদের হিন্দী মাসিক পত্রিকা ‘বাল ভারতী’তে ছাপা হয়।
হাতে খড়ি সংখ্যা? ব্যাপারটা জানতে চাইলাম। ওই সংখ্যাতে কেবলমাত্র কিশোরদের লেখা ছাপা হয়৷ মধুসূদন, রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের মতো বড়ো লেখকদেরও কিশোর কালের লেখা প্রকাশিত হয়। বাবাঃ! অনেক কিছুই ধীরেন্দ্রনাথের মাথায় খেলে তো।
তা খেলে বলেই তো পত্রিকার উদ্যোগে ছোটদের আসর প্রতিষ্ঠিত হয়। দূর মধ্যপ্রদেশে তার কয়েকটি শাখা কাজ করলেও আসর তেমন জনপ্রিয় হয়নি। তবে পত্রিকার পরিচালনায় ছোটদের জন্য মুক্তাঙ্গন চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা খুবই জনপ্রিয় হয়। এখন আরও কোন কোন প্রতিষ্ঠান এবিষয়ে তৎপর হয়েছেন। আর ছোটদের কথার নাট্যশাখা ‘শিশুরঙ্গম্’ তো আজ রীতিমত প্রতিষ্ঠিত। প্রদীপ রায়ের দুটি নাটিকা ‘বুদ্ধির্যস্য’ এবং ‘বিজয়ার পেন্নাম’ মঞ্চস্থ করে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা সুরু হয়। প্রদীপ রায় তো গোড়া থেকেই নানা ভাবে সাহায্য করছিলেন এবারও করলেন। অমল বন্দ্যোপাধ্যায় ছোটদের শেখাবার এবং পরিচালনার ভার নিলেন। আর গানে সুরারোপ করে শেখাবার দায়িত্ব নেন শ্রীমতী মাণিকমালা মুখার্জী। সেপ্টেম্বর ১৯৭৪এ এক দুর্যোগের সন্ধ্যায় অগণিত শুভানুধ্যায়ীদের সহযোগিতায় অনুষ্ঠান জমজমাট হয়ে ওঠে। সাহায্য যে কত রকমের তার একটা দৃষ্টান্ত দিই। দুর্যোগের রাতে ছোট ছোট শিল্পীরা ঘরে ফিরবে কি করে? মুশকিল আসান করলেন ডঃ সুবোধ মুখোপাধ্যায় দুটি গাড়ী দিয়ে।
এমনি আর এক দুর্যোগের সন্ধ্যা ৯ই ডিসেম্বর ১৯৭৩। ওই সন্ধ্যায় পত্রিকার প্রথম বর্ষ পূর্তি অনুষ্ঠানে দুর্যোগ মাথায় করে কলকাতা থেকে এসে হাজির হলেন রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় এবং শিশির মজুমদার। আর্য ব্যানার্জী মশাই বয়সের ভার সত্ত্বেও শিশু প্রতিষ্ঠানের মঙ্গল কামনা করতে উপস্থিত ছিলেন। এত উৎসাহ, এত প্রেরণা তা কি কখনও ব্যর্থ হয়?
তাই নানা বাধা সত্ত্বেও ধীরেনবাবু এগিয়ে মনে শুধু একটিই ক্ষোভ—না আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির ক্ষোভ নয় কিংবা বহুল প্রচারিত পত্রিকাগুলির সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতায় বিড়ম্বনাও নয়। তাঁর ক্ষোভ—প্রগতিশীল বলে পরিচিত মানুষেরও ঘরের টেবিলে সুস্থ সুন্দর জীবনের বাণীবহ পত্রিকার—তা সে নাই বা হোল ছোটদের কথা—স্থান নেই বললেই চলে। এ ক্ষোভ তিনি করতে পারেন।