ছোটদের কথা
ছোটদের কথা
ছোট বা বড় ফাঁসযুক্ত নাইলনের জাল বন্য এবং পরিযায়ী বিভিন্ন পাখি ও প্রাণীদের ক্ষেত্রে মরণফাঁদ হিসাবে কাজ করছে। পুকুরের উপর পুকুর মালিকেরা জাল বিছিয়ে রাখে। মাছের টানে পাখিরা যখন ছোঁ মেরে পুকুরে নামতে যায়, তখনই ঘটে বিপত্তি। এই পাতা জালগুলিতে আটকে যায় তাদের মাথা, পা ইত্যাদি। তারপরে ছটফট করতে করতে মারা যায় এরা। এভাবে ধরা পড়ছে অগণিত বক, মাছরাঙ্গা ও পানকৌড়ির মতো আমাদের অতি পরিচিত জলজ পাখিরা। পুকুর মালিকদের দাবি পাখিরা ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ ধরে নিয়ে চলে যায়। ফলে তাদের বিপুল ক্ষতি হচ্ছে। অথচ বিভিন্ন স্থানীয় মানুষ ও স্বেচছাসেবী সংগঠনের বক্তব্য, এই পাখিগুলি বিভিন্ন অসৎ মানুষ কিনে নেয় ও অনেক দামে চোরাপথে বিক্রি করে দেয়। ফলে খাদ্যের অভাবে ও অকাল মৃত্যুজনিত কারণে পাখিদের সংখ্যা এবং তাদের জীববৈচিত্র যেমন হ্রাস পাচ্ছে, তেমনই জীববৈচিত্রের উপর কুপ্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
শীতের শুরুতে ভারতবর্ষের মত দেশে বিভিন্ন ধরণের পরিযায়ী পাখি আসে খাদ্যের সন্ধানে এবং বাসস্থানের জন্য। এরা ক্ষণিকের অতিথি। অথচ এদেরকে ধরার জন্য ফাঁদ পাতা রয়েছে সমগ্র ভারতবর্ষব্যাপী। নদীর তীরবর্তী অঞ্চলগুলিতে ও বিভিন্ন গাছের ওপর জাল পেতে রাখে কিছু অসৎ ব্যবসায়ী। এদেরকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মদত দেয় কিছু স্থানীয় মানুষ। ফলে এখানে পেঁচা সহ বিভিন্ন নিশাচর পাখিরা যেমন আটকে যায় তেমনি আটকে যায় বাদুড় ও চামচিকির মত প্রাণীরাও। রুডি শেলডাক, রিভার লেপউইং, নদী তিতির, কোঁচ বক, গ্রেটার ফ্লেমিংগো, ব্রাহ্মণী হাঁসের মতো পরিযায়ী পাখিরা এই ফাঁদে আটকে ছটফট করতে করতে মারা যায়। পাখির সুরক্ষা বলতে পঞ্চায়েত এবং বনদপ্তরে লাগানো কয়েকটি সাইনবোর্ড।
বর্তমানে শীতকালে জঙ্গল সংলগ্ন হোটেল এবং রিসোর্টগুলিতে ‘বনফায়ার’-এর আয়োজন করে। এখানে আদিম মানুষের মতো এই সকল ফাঁদে পরা পাখিদের পুড়িয়ে মেরে খাওয়া হয়, এ এক জঘন্যতম অপরাধ।
শস্যক্ষেত্রগুলিতেও চাষিরা এখন জাল বিছিয়ে রাখছে পাখিদের হাত থেকে শস্যকে বাঁচাতে। এতে কেবলমাত্র পাখি নয়, গোখরোসাপ ও শাঁখামুটি সাপের মত অসংখ্য সাপও এই ফাঁদে আটকে পড়ে মারা যাচ্ছে।
সরকারকে যেমন এগিয়ে আসতে হবে, তেমনিই মানুষের মধ্যেও সচেতনতা বৃদ্ধি পেতে হবে, তবেই বাঁচানো যাবে এই নিরীহ প্রাণীদের।