ছোটদের কথা
ছোটদের কথা
বিলে। বিলে। এই বিলে-এ-এ...
তোমাদের বলতে একদম ভুলে গেছি— বিলটু-র ডাক নাম বিলে। বিলটু-র মা ওকে ডেকেই চলেছেন। ওর সেদিকে খেয়াল নেই। বিলে তখন এক মনে প্রজাপতি দেখছে। দেখেই চলেছে।
শেষে মা মিলিকে বললেন— যা তো মা, দাদাকে ডেকে নিয়ে আয়। বলবি মা ডাকছে। তাড়াতাড়ি আসে যেন। হরিপদদার দোকান থেকে আড়াইশো বেসন আনতে হবে।
মিলি বলল— বেসন দিয়ে কী হবে মা?
—আমাদের ছাদ-বাগানের কুমড়ো গাছে কেমন কুমড়ো ফুল হয়েছে দেখেছিস? বেসন দিয়ে কুমড়ো ফুলের বড়া করব। কিছুটা ভাজা-ই রাখব। আর, বাকিগুলোর তরকারি করব। যা যা দাদাকে ডেকে নিয়ে আয়।
মিলি বলল— এক মিনিটের দাদাকে ডাকতে হবে কেন? আমি কি আনতে পারব না? তুমি আমায় পয়সা দাও।
মিলির মা কপট রাগ দেখালেন— ও কী কথা মিলি— এক মিনিটের দাদা? তোকে অনেকবার বলেছি, বিলেকে এক মিনিটের দাদা বলে ডাকবি না। কেন, শুধু দাদা বলতে তোর অসুবিধা কোথায়?
মিলি মাকে বলে— তুমি মিছিমিছি রাগ করছ। তোমার মুখেই শুনেছি দাদা হওয়ার ঠিক এক মিনিট পরেই আমি হয়েছি। তা, আমি ভুলটা কি বলেছি?
মা বললেন— না, ভুল কিছু বলিসনি। তবে শুনতে কেমন লাগে না? কই, বিলে তোকে তো এক মিনিটের ছোটো বোন বলে ডাকে না। এমনকী মিলি বলেও ডাকে না। ছোটো বোনু বলেই তো ডাকে। ডাকে না? তাহলে তুই কেন ওকে এক মিনিটের দাদা বলে ডাকবি?
মিলি সাফাই দেয়— আমি কি বাইরে কোথাও ডাকি নাকি? আমি বাড়িতে ওর সাথে একটু মজা করি। যাক গে, তুমি কি বেসন আনতে আমাকে পয়সা দেবে? নাকি, দোকান করার কাজটা ছেলে বলে দাদা-ই করবে? আর মেয়ে বলে ও কাজটা আমার কাজ নয়?
মিলির মা মিলির কথা শুনে অবাক না হয়ে পারেন না। এতোটুকু মেয়ের মুখে এ কী কথা?
মা রাগতে গিয়েও রাগতে পারলেন না। ভাবলেন কেউ এমন কথা ওর মাথায় ঢুকিয়েছে। তাই বলছে। ওর ভুলটা ভেঙে দেওয়া দরকার। তাই, গলায় আদর ঢেলে মিলিকে বলেন— তোর বাবা বা আমি তোদের ছেলে বা মেয়ে বলে কোন তফাৎ করি? তোর মনে এমন কথা এল কী করে? এমন কথা মনে কখনো আনবি না। তোরা তো দেখতে পাস, তোদের বাবা দোকান বাজার বেশি করে বটে, মাঝে মাঝে তোদেরও সাথে নিয়ে যায়। আর আমি বাড়ির কাজটা বেশি করি। তা বলে, প্রয়োজনে আমিও কি দোকান বাজার করি না? করি এবং তোদেরও সাথে নিয়ে যাই। আবার প্রয়োজনে তোদের বাবাও বাড়ির কাজও করে। রাঁধে, ঘর গোছায়, কাজের দিদি না এলে, আমি পেরে না উঠলে, বাসনও তো মাজে। ছুটির দিনে আমায় কুটনো কেটে দেয়। তারপর ধর, যেদিন লুচি কি পরোটা হয়, বাবা বাড়ি থাকলে আমি ময়দা মেখে বেলে দিই। আর তোদের বাবা ভাজার কাজটা করে। করে তো?
মিলি ঘাড় নাড়ে।
—আবার কখনো বিপরীতটাও আমরা করি। করি না? তারপর ধর, বাবার অফিসের অনেক কাজ, ওঁর সুবিধা হবে বলে, অবসর পেলে আমিও তো করে দি। দিই না? কোন কাজটা ছেলেদের, কোনটা মেয়েদের আমরা কি তেমন করে ভাবি? কী রে ভাবি?
মিলি ঘাড় নেড়ে বলে— না।
মা মিলিকে কাছে টেনে নিয়ে মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বলেন— তাহলে তুই কেন দোকান করতে পারবি না মা? খুব পারবি। আমরা তো তেমনই ভাবি। তুই তো মোটামুটি হিসাব শিখে গেছিস। কথা তা নয়। আমি সেরকম কোনো কিছু ভেবে ওকে দোকানে পাঠাবার কথা বলিনি। আমি দেখলাম তুই লেখাপড়া করছিস।
বিলেকে দেখতে পেলাম না। তাই ওর খোঁজ করছিলাম। এমন সময় বেসন আনার কথা মনে এসে পড়াতে তোর দাদাকে দিয়েই আনাব ভাবলাম। ঠিক আছে, এই নে, টাকা নে। চট করে আড়াইশো বেসন আর দশ টাকার কালো জিরে নিয়ে চলে আয় দেখি। কারোর সাথে যেন কথায় মেতে উঠিস না। আর যাবার সময় দাদাকে ডেকে দিতে ভুলিস না যেন। জানিস মা, আজ একটা মজা হবে।
মজার কথা শুনে মিলির মন থেকে খারাপ ভাবনার মেঘ পাখির মত পাখা মেলে উড়ে গেলো! খুশি-মাখা গলায় মিলি মার কাছে জানতে চাইল— কী মজা হবে মা?
—এখন বলে দিলে মজাটাই যে মাটি হবে!
—বলো না মা, বলো না, তুমি যে কী না, আমার যে আর তর সইছে না!
মা হাসতে হাসতে মিলিকে বললেন— আজ আমি যে কুমড়ো ফুলের বড়া ভাজব— তোরা দু-ভাইবোন মিলে বেসন গুলে দিবি, কেমন?
কী ভালো মজা হবে না?
—দারুণ হবে, আমরা বেসন গুলব!
মিলি খুশিতে ডগমগো হয়ে দাদাকে এ খবরটা জানিয়ে, বেসন আর কালো জিরে কিনতে দোকানে ছুটল।