ছোটোদের কথা
ছোটোদের কথা
স্বনামধন্য ‘ছোটদের কথা’ শীর্ষক পত্রিকার সম্পাদক কল্পনা সুরকে আমি আমার ছাত্র জীবন থেকে চিনতাম গভীর ভাবে। তাঁর দাদা সুচিকিৎসক ডাক্তার পরিমল মিত্র আমাদের বাড়ির হাউস ফিজিসিয়ান ছিলেন। আমার মা চিকিৎসার ব্যাপারে তাঁর সুপরামর্শ ছাড়া এক পা নড়তেন না। তাঁর চিকিৎসা ধন্বন্তরী। আমার কলেজ জীবনে একবার স্ট্রং ডাইরিয়া হয়ে দীর্ঘদিন বি.সি. হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। বাইশ বোতল স্যালাইন ও পাঁচদিন অক্সিজেন টেনে ছিলাম। এক টানা আড়াই মাস ভর্তি ছিলাম। ডা. মিত্র-এর শলাপরামর্শে সেই সময় আমার মা সর্বদা চলতেন। যখন আমি একটু চাঙ্গা হলাম তখন আমার বেডের পাশে অন্য বইপত্রের সঙ্গে ‘ছোটদের কথা’ও ছিল। মনের শক্তি বৃদ্ধির জন্য। মফঃস্বল শহর থেকে সর্বাঙ্গিন সুন্দর ‘ছোটদের কথা’ পড়ে মনের ভাবনাকে বাড়িয়ে দিত। সেই থেকে পত্রিকার সম্পাদকের প্রতি অন্তর্গত শ্রদ্ধা জেগে ওঠে। ডাক্তারবাবুর ছেলে কবি অচিন্ত্য মিত্র এর সঙ্গে আলাপ হয়। আমাদের ছোটবেলায় শুকতারা ছিল নিত্য সঙ্গী। অচিন্ত্যদার ঘরেই প্রথম ‘ছোটদের কথা’র সম্পাদকের সাথে আলাপ হয়। এত ধীর স্থির শান্ত প্রকৃতির। আমার ভীষণ ভাল লাগে। পারিবারিক ঐতিহ্য ধীর স্থির প্রকৃতির। পরবর্তী সময়ে আমার একান্ত শ্রদ্ধাভাজন ধীরেন্দ্রনাথ সুর মহোদয়ের সঙ্গে আমার আলাপ। পরবর্তীসময়ে উপলব্ধি হলো, এঁনাদের দুজনের লক্ষ্য শিশু-কিশোর জগতকে নাড়া দেওয়া। নতুন লেখকদের লেখা সুন্দরভাবে প্রকাশ করা। সম্পাদকের লক্ষ্য ছিল পরিচ্ছন্ন পরিশীলিত পত্রিকা বের করা। উভয়ের পেশা শিক্ষকতা। তাঁদের উপার্জনের একটি ভাল অংশ পত্রিকার কাজেই ব্যয় হত। রাজযোটক। কখন তাঁদের মধ্যে মতদ্বৈত হয়নি। বিরল ঘটনা। তাঁদের একজন প্রকৃতির শাশ্বত নিয়মে অন্তরালে চলে গেলেন। রাখার বহু চেষ্টা সত্ত্বেও পূরণ হল না। আমাদের বিশ্বাস, উনি ঠিক ভাবেই গেলেন। তাঁদের লক্ষ্য ছিল পত্রিকাকে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তের পাঠকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া। পেয়েছিলেন পত্রিকার অলংকরণের কাজে চিত্রশিল্পী অবি সরকারকে। যিনি শিশু-কিশোরদের মনের জগতকে খুব ভাল ভাবেই চিনতেন। একবার পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমিতে রাজ্য ভিত্তিক সম্মেলনে ‘ছোটদের কথা’ শীর্ষক পত্রিকার স্মারক সম্মান সম্পাদকের পক্ষে আমার উপর বর্তেছিল। সম্মান বোধ করেছিলাম। জেনেছি, সম্পাদক কল্পনা সুরের লেখার হাত ছিল চমৎকার। কিন্তু তিনি বরাবর আড়ালেই ছিলেন। মনে হয়, তিনি পত্রিকার পরিচ্ছন্ন প্রকাশকেই জীবনের পবিত্র ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। সেখানেই তিনি সার্থক হয়েছেন। তাঁর এই কাজে সর্বক্ষণের সঙ্গী সেই পত্রিকা বহন করে চলেছেন। পরিশেষে, সম্পাদকের প্রতি আমার সুগভীর বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করি।