ছোটোদের কথা
ছোটোদের কথা
মনে আছে, সেই যে ছোটবেলার স্মৃতি
খেলা, আনন্দ, মজাই ছিল তখন রীতি।
মনে আছে পাশের আরামকেদারায়
বসে থাকতো ঠাম্মি,
ছোট বড় খুনসুটিতে ডুবে থাকতাম আমি।
ঠাম্মি ছিল শিক্ষিকা ভূগোলের,
জিজ্ঞেস করেছিল, ‘‘বল তো পৃথিবীর
কত ভাগ জলের?’’
তাঁর মতে, পৃথিবী হোক সমতল বা গোল,
পড়াশোনায় আর বিনোদনে থাকবে নো গণ্ডগোল।
সন্ধের ছোঁয়ায় নেমে আসে যখন অন্ধকার,
তখনই চাগিয়ে ওঠে লুডো খেলার জোয়ার।
কখনো পড়ে ছক্কা, তো কখনো পুট,
কখনো ঘুঁটির জোড় তো কখনো বিজোড়,
ঠাম্মি বলতো, ‘‘হারলে চালাও চোট্টামি,
কিন্তু হয়ে পড়ো না কমজোর।’’
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলে প্রকৃতি লাগে বিচিত্র,
সূর্যের স্নিগ্ধ রোশনাইয়ে সে এক অপূর্ব চিত্র।
চিত্রে আঁকা টবের কিছু গাছ ও গাছালী,
তাদের দেখভাল করছে ঠাম্মি, গাছের
প্রতি তার ভালোবাসা চিরকালই।
কখনো চুপ করে বসে শুনতাম ঠাম্মির
কাছে কিছু গল্প, কিছু কবিতা,
তাঁর মুখে নজরুলের ‘লিচু চোর’
আজও মনে গাঁথা।
বিকেল ৫টা বাজলেই ঠাম্মির দিদি নং ১-এ চোখ,
ঠাম্মির সাথে পাল্লা দিয়ে দিতাম উত্তর
আমিও, ঠাম্মি পারতো না গিলতে ঢোঁক।
কিন্তু কোথায় যেন হারিয়ে যায় আমার
সেই ছোটবেলা,
সময়ের দিকচক্রে আবদ্ধ জীবন,
কেটে যায় সহস্র বেলা।
কোথায় যেন মিশে যায় ছোটবেলার সেই ছন্দ,
এক অপ্রত্যাশিত হাওয়ার দাপটে সেই
ছন্দের দরজা হলো বন্ধ।
পড়ে রইলো কিছু স্মৃতি, কিছু মুহূর্ত,
এখানে সময় এগিয়ে চলেছে বড়ই দ্রুত।
থাকবে সবকিছু এক ডায়েরিতে বন্দি করা,
যার পাতা সিক্ত চোখের জলে,
শেষ হলো এক গল্প, কিন্তু পটভূমিটি
থাকবে মনে অনির্বাপিত হয়ে জ্বলে।
ঠাম্মি, থাকবে তুমি মনে, থাকবে সবার হৃদয়ে,
থাকবে সবার স্মৃতিপটে, এক গুচ্ছ গল্প
নিয়ে- থরে থরে।