ছোটোদের কথা
ছোটোদের কথা
‘‘ছোটদের কথা মানে ছোটদের মনের কথা
ছোটদের ছোট থেকে বড় হবার কথা’’— এই লক্ষ্যে ধীরেনবাবুর উদ্যোগে এবং কল্পনা সুর-এর সম্পাদনায় ৫২ বছর আগে প্রকাশিত হয় ‘ছোটদের কথা’ মাসিক পত্রিকা। আমি প্রথম মুদ্রণ কাল থেকে এই পত্রিকার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত ছিলাম। পরবর্তী কালে অন্যান্য দায়িত্বের চাপে সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারিনি। কিন্তু যোগাযোগ কখনোই বিচ্ছিন্ন হয়নি। ছাপার কথা বলতেই মনে পড়ে সেই দিনগুলির কথা যখন ছাপা হতো লেটার প্রেসে অর্থাৎ সীসার তৈরি অক্ষর একটি একটি করে বসিয়ে পাতা তৈরি করা হতো এবং সেটা লোহার ফ্রেমে আটকে মেশিনে ছাপা হতো। ছবি ছাপার জন্য শিল্পী অবি সরকার লিনোর উপরে ছবি এঁকে দিতেন সেটা আমি লিনোকাট দিয়ে খোদাই করে দিতাম। তারপর কাঠের ব্লকে লোহার পিন দিয়ে আটকানো হতো, সেটি যেখানে বসানোর কথা কম্পোজিটার সেটা পেজে বসিয়ে দিতো। এভাবেই শিল্পী অবি সরকার প্রথমদিকের বেশ কয়েক বছর পত্রিকার ছবি ছাপার ব্যবস্থা করে দিতেন। তারপর এখন কম্পিউটার প্রিন্টিং আসার পর আর সেই ব্লকের জন্য কোন অসুবিধা থাকে না।
আজকের যাঁরা ছবি আঁকছেন, তাঁরা পত্রিকাকে ভালোবেসেই আঁকছেন। শত প্রতিকূলতার মধ্যেই ধীরেনবাবু যেভাবে পত্রিকাটির মান অক্ষুন্ন রেখে এগিয়ে চলেছেন, তা সত্যিই অভিনন্দনযোগ্য। বড়োরাই তো ছোটদের বড়ো করে তোলে এবং তাদের সঠিক পথে বড়ো করে তোলার ক্ষেত্রে ‘ছোটদের কথা’ তাদের মনকে যতটা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, ততটাই তার সফলতা। সেই পথেই এগিয়ে চলেছে ‘ছোটদের কথা’।
পত্রিকার চলার পথে ‘ছোটদের কথা’-র সম্পাদিকা কল্পনা সুর প্রথম থেকেই নীরবে পত্রিকাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সবরকম বিশেষ করে আর্থিক দায়স্বীকারে কখনও পিছুপা হননি। আজ তাঁর অবর্তমানে আমি আশা করি তাঁর উত্তরসূরীরা এই পত্রিকাকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন এবং তাঁর মধ্য দিয়ে তাঁর স্মৃতিকে ধরে রাখবেন। আমি প্রয়াত কল্পনা সুরের উদ্দেশ্যে আমার শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।