ছোটোদের কথা
ছোটোদের কথা
গত ০৪.১২.২০২৪-এ অমৃতলোকে যাত্রা করলেন আমাদের প্রিয় দিদি কল্পনা সুর। সুদীর্ঘ ২৩ বছরের বর্ণময় কর্মজীবন কাটিয়ে। অবশ্য প্রথাগত অবসরগ্রহণের পরও তাঁর কর্মমুখর দিবস-যাপন কখনও থেমে থাকেনি আমৃত্যু। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারিণী এই বিদূষী নারী একাধারে ছিলেন একজন প্রকৃত শিক্ষিকা ও সুবক্তা। বিদ্যালয়ে শ্রেণীকক্ষে তাঁর পাঠদানের সাথেই চলত নিরলস সাহিত্যচর্চা ও লেখালেখির আঁকিবুঁকি। বহুবার তিনি নিজ মুখেই বলেছেন এই কথাগুলি— ও কিছু নয় রে! ওই একটু আঁকিবুঁকি-কাটাকুটি খেলি শব্দ নিয়ে।
শিশু সাহিত্যের প্রতি তাঁর নিবিড় আগ্রহ, ছিল অপরিসীম ভালোবাসা। তাঁর হাত ধরেই আত্মপ্রকাশ করল ‘ছোটদের কথা’, যা পরবর্তীকালে বর্ধমানে শিশুসাহিত্য ক্ষেত্রে এক উজ্জ্বল মাইল-ফলক হয়ে থাকল। আগামীদিনের অনেক কবি, লেখক, প্রবন্ধকারই তাদের কল্পনার ডানা মেলেছিল ‘ছোটদের কথা’র পাতায় পাতায়।
‘শিশু নিকেতন’। হ্যাঁ আক্ষরিক অর্থেই শিশুদের জন্য অনিবার্য ও অবশ্যগামী এক বিদ্যানিকেতন যা সম্পূর্ণ ব্যক্তি উদ্যোগে নির্মিত। বর্ধমান শহরে পড়াশুনার পীঠস্থানে পরিণত হয়েছিল এই বিদ্যায়তন। এই মহান কর্মযোগীর মহতী সব কর্মকান্ডের মধ্যে এই প্রতিষ্ঠানকে সম্পূর্ণ রূপে ছাত্রদের উপযোগী করে গড়ে তোলা ছিল তাঁর অন্যতম সফল উদ্যোগ। আমার সাথে ওনার পরিচয় ১৯৯৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে। আমি তখন সদ্য যোগদান করেছি বর্ধমান সাধুমতী বালিকা শিক্ষা সদনে। ওনার ভানহীন নম্রতা আমাকে মুগ্ধ করেছিল। প্রথমদিন থেকেই ওনার আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে বেড়ে উঠেছি। নানা বিষয়ে ওনার সুচিন্তিত মতামতে সমৃদ্ধ হয়েছি। আশ্চর্য সুন্দর ছিল ওনার কৌতুক বোধ। ১৯৯৭ থেকে ২০০১— এই অল্প সময়েই উনি আমার মননে গভীর ছাপ ফেলেছিলেন, যা বিদ্যালয় থেকে তাঁর অবসরগ্রহণের পরও অমলিন থেকে গেছে।
কর্মজীবনে ওনার সাথে কোন ছবি আমার কাছে হয়তো নেই কিন্তু সে সময়ে আমরা মুহূর্তকে প্রাণে প্রোথিত করতাম! মোবাইলে নয়।
কর্মযোগী এই মহতী মানুষটিকে আমার শতকোটি প্রণাম। আসলে ‘মহত্ব’ তো কোন প্রোডাক্ট নয় যা প্রচার করা যায়, দেখানো যায় বা কেনা যায়। মহান কেউ হতে পারে না। ‘মহান’ হওয়াটা কোন চয়েস নয়, কোন অপশন নয়, কোন জীবিকা নয়, মহান হয়েই জন্ম হয়, মহত্ব একটা স্ব-ভাব। আজ উনি আমাদের মাঝে না থাকলেও থেকে গেছে ওনার কর্মকান্ড যা আমাদের প্রাণিত করেছে, শানিত করেছে। বারেবারেই।
আন্তরিক ভাবেই শ্রদ্ধা ও প্রণাম জানাই এই মহাপ্রাণকে।
ওম শান্তি॥