ছোটোদের কথা
ছোটোদের কথা
ছোটদের কথা-র গ্রীষ্ম সংখ্যার (১৪২২) ছয় ঋতুর সম্বন্ধে বাংলাদেশের যে টুকরো-টুকরো ঘটনা-বর্ণনা তুলে ধরেছেন, সেগুলি চলমান ছবির মত। পড়তে পড়তে পৌঁছে গেছি বাঙলার সেই গ্রামটিতে, যেখানে আপনার জন্ম। কেন জানিনা, মনে হয়েছে, লিখতে লিখতে আপনার দু’চোখে ছয় ঋতুর মধ্যে বর্ষাই বেশি জায়গা দখল করেছিল। আজ দালান-কোঠায় থাকলেও টিনের চালে বাতাসের গানে বৃষ্টি-ফোঁটার সেই সঙ্গত... আহা, তা ভোলা বড় কঠিন। টিনের ছাউনির নীচে রাতে শেয়ালদের আশ্রয় নেওয়ার কথা আজ রূপকথা। ‘ওরা তো রাতের জীব... আবার জঙ্গলে চলে যাবে...’ পড়তে পড়তে হাজির হয়ে গেছি আমিও সে রাতে কাকিমার পাশে। বঙ্গোপসাগরের কাছাকাছি আপনাদের গ্রামটা, যেখানে শীতে লেপ থাকে না...। ভাবা যায় না। ‘কন্ন্যাল’, ‘ছন’, ‘লাকুড়ি’— এপার বাঙলায় এসে এইসব ফেলে আসা কত শব্দগুলোও যেন অবসরে স্মৃতির জাবর কাটা-শরীরী রূপ পায়। তাই না? পতেঙ্গা জাহাজ বন্দর, ‘চর’ নামের সেই সবুজ-ঘেরা-দ্বীপ। পড়তে পড়তে আমি যেন আপনার সঙ্গী হ’য়ে সেখানে না পৌঁছে পারিনি। শুধু ভালো লাগলো বলে শেষ করা যায় না। ভাবিয়ে দেয়। আবিষ্ট করে। স্মৃতি-চারণার একটা মন-খারাপি ভাবনা জড়িয়ে ধরে... কষ্ট হয়... ঝেঁপে বৃষ্টি আসে মনের আকাশে। শ্রদ্ধা নয়, দাদার ভালবাসা নেবেন। যুগলে ভালো থাকুন ছোটদের কথা নিয়ে। —সুনীতি মুখোপাধ্যায়
তুতুলের বাবা দালান তুলেছে, টিনের চালের ঘর—
ভাঙ্গা পড়ে গিয়ে এখন দু’খানি পাকা ঘর পর পর।
দালানে গ্রীষ্ম পেরিয়ে এল বর্ষার কাল,
বৃষ্টি-ঝরার রাতে আহা, ওরা আগে হ’ত নাজেহাল।
পুরানো টিনের ছাউনি গড়িয়ে বিছানায় জল প’ড়ে—
জেগেই কাটাতে হ’ত যে ওদের প্রায় সারা রাত ধরে।
এখন তা নয়, তবু বর্ষায় তুতুলের ঘুম নাই,
বাবা-মা ঘুমায়, ওর জেগে থাকা, ঘন ঘন তোলে হাই।
মা টের পেলে বলে, কি ব্যাপার? ঘুমাসনি কেন তুই?
তুতুল বলল, ইচেছ হচেছ, আগের সে ঘরে শুই।
টিনের চালে যে শুনতে পেতাম বৃষ্টি ঝরার ধুম,
শুনতে শুনতে কখন যে চোখে লেগে যেত জোর ঘুম।
দালানে তো সেই শব্দই নেই, এ ঘর মা, খুব বাজে,
সেই কারণেই আমার দু-চোখে ঘুমই আসছে না যে!
‘ছোটদের কথা’র সম্পাদক কল্পনা সুরের ‘‘আমার শৈশব স্মৃতিতে ছয় ঋতু’’— স্মৃতি চারণামূলক নিবন্ধটি এই তথ্য ছড়াটি লিখিয়ে নিলো। —সুমু