ছোটোদের কথা
ছোটোদের কথা
আমি শিশু নিকেতন বিদ্যালয়ের সহশিক্ষিকা হিসাবে ২০০১ সালে যোগদান করি। মূলতঃ সেই কারণেই বিদ্যালয়ের প্রাণ প্রতিষ্ঠাতা মাননীয় ধীরেন্দ্রনাথ সুর মহাশয় ও কল্পনা সুর মহাশয়ার সাথে সাক্ষাত ঘটে। তবে স্যারের বাড়ি আমার শ্বশুরালয়ের পাশেই হওয়ায় ম্যাডাম কল্পনা সুরকে আমি প্রতিনিয়ত দেখতাম। ছাদ বাগানের পরিচর্যায় যখন প্রতিদিন গাছে জল দিতেন, লাউশাকের কচি পাতার বেড়ে ওঠার যত্ন নিতেন তখন তার সাথে দেখা করার জন্য একদিন আলোদির সাথে গিয়েছিলাম ওনার বাড়ি। ছাদে ছাদে সেই শাক দিয়েছেন, ভালোবাসার সেই লাউশাকের স্বাদ ছিল অমৃত। এরপর ধীরে ধীরে তিনি হয়ে উঠলেন অত্যন্ত কাছের জন। ভালোবাসায় ভরিয়ে দিলেন। যখনই তাঁর কাছে যেতাম এতো খুশি হয়ে কাছে বসাতেন যেন আমি কতো আপন। সবার খোঁজ নিতেন। আমার কাছে তিনি কাকিমা হিসাবে পরিচিতা থাকলেও এক অজানা ভালোবাসার বন্ধনে তিনি জড়িয়ে নিয়েছিলেন। একদিন তিনি ঘোষণাই করে বসলেন— সুপ্রভা তুমি ঠাকুরের বাসনগুলো নিয়ে যাবে। তুমি তো ঠাকুরের কাজকর্ম করো। প্রথমে ভেবেছিলাম এ বাবা! কে কি মনে করবেন। না, পরে স্যার বললেন, ‘‘তোমার কাকিমার ইচ্ছা তুমি এসো— বাসনগুলো বুলিকে দিয়ে বের করেছি।’’ গেলাম— পরম তৃপ্তির সাথে কাকিমা একটা-একটা করে প্রায় এক বস্তা সেকেলের ভারী কাঁসা পিতলের বাসন আমার হাতে তুলে দিলেন। একবার অঙ্গে ধারণ করেছেন এমন শাড়িও দিলেন, শুধু আমাকে নয়, অনেকের জন্যই একটা একটা পাট করা শাড়ি আমার হাতে দিয়ে বললেন, সবাইকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। এই ভালোবাসা ভাগ করে দেওয়া দেখে আমি আপ্লুত।
আমার নাতনী হওয়ার খবরে উনি এত খুশি যে যখনই যেতাম উনি সব ছবি দেখতে চাইতেন। সবার খোঁজ নিয়েই উনি খুশি। কোনো মানুষের সমালোচনা উনি কোনোদিন করেন নি। নাতনীকে নিয়ে বেশ কয়েকবার ওনার কাছে গেছি। উনি জড়িয়ে ধরে আদর করে আশীর্বাদ করেছেন, একটা বাচ্ছা কী খেতে পারে ভেবে তার ব্যবস্থাও করেছেন।
অসুস্থ হওয়ার পরও বার বার ছুটে যেতাম একবার দেখতে। একদিন আমার হাতটা চেপে ধরে বলেছিলেন, ‘আমার উপর থেকে ডাক এসে গেছে কিন্তু আমি কেন যেতে পারছি না?’ এভাবেই কি মানুষ টের পান শেষ ক্ষণের আগাম বার্তা? এক আলোকময় শরীর নিয়ে তিনি যাত্রা করেছেন আনন্দলোকের পথে। প্রণাম কাকিমা। ভালো থাকুন অমৃতলোকে।