ছোটোদের কথা
ছোটোদের কথা
AI কে জিজ্ঞাসা করা মাত্রই সে এখন অনেক তথ্য বলে দিচ্ছে। বাচ্ছারা কেউ কেউ আবার কৌতূহলী হয়ে তাদের বইয়ের প্রশ্ন উত্তর জানতে চাইলে সুন্দর করে সাজিয়ে লিখেও দিচ্ছে। এখন অনলাইন কোর্সগুলোর পরীক্ষায় ছোটো ছোটো প্রশ্নের উত্তর দিতে অনেক সুবিধা পাচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীরা। অনেকেই লক্ষ করেছেন মোবাইলে হোয়াটস্অ্যাপ খুললে প্রথমেই সেই আতস কাঁচের ছবি দেওয়া আছে তারপর লেখা আছে ‘Ask Meta AI or Search’। আওয়াজ করেই উত্তর দিয়ে দিচ্ছে। না পারলে বলছে আপনিই বলুন। আপনি কিছু বললেই সেটা মেশিনারি সিস্টেমে রেকর্ড হয়ে যাচ্ছে। তথ্যের আকর হয়ে ওঠা এই সব AI গুলোকে সংগঠিত করলে হয়ে যাবে OI। হয়তো তখন আর টিচার না লাগতেও পারে। একটা মোবাইল হয়ে উঠবে শিশুর শিক্ষক। যেমনটা এখনই তার জীবনকে অনেকটাই গ্রাস করেছে মোবাইল।
শুধু পৃথিবীব্যাপী দুর্যোগ, অতিমারি কিংবা পারমাণবিক যুদ্ধ নয় AI বা আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিমমেধার দাপটেও মানব সমাজের বিলোপ সাধন ঘটতে পারে এমনই মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ। আবার এক দল পণ্ডিতের মত, এই আশঙ্কাকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানো হচেছ, দ্য সেন্টার ফর AI সেফটি ওয়েবসাইট বিপর্যয়ের বেশ কয়েকটি নমুনা তুলে ধরেছে। AI-এর এই দাপট নিয়েই অনেকেই বেশ চিন্তিত। অনেক মানুষ আগামীদিনে কর্ম হারাবে। ইলন মাস্ক অবশ্য কর্মীদের আপডেট হওয়ার কথা বলছে।
কৃত্রিম মেধা সশস্ত্রীকরণে ব্যবহৃত হচ্ছে রাসায়নিক অস্ত্র তৈরি করতে। রোগ নির্ণয় ওষুধ তৈরির প্রযুক্তিতেও কার্যকরী। অতি সম্প্রতি কে কবে কেন মরবে সেটা বলার দিকেও এগিয়ে যাচেছ সে। ঈশ্বর সম্পর্কিত সমস্ত ধারণাকে আগামীতে সন্দেহের চেম্বারে ফেলে দিয়ে মানুষকে আরও বাস্তববাদী কর্মমুখী করবে বলেই বিশেযজ্ঞদের ধারণা।
শুধু কি তাই ইতিমধ্যেই গলার স্বর হুবহু বসিয়ে চৌর্যবৃত্তিতে কাজে লাগানো হচ্ছে তাকে। কৃত্রিম মেধাজাত ভুল তথ্য দিয়ে সমাজে অস্থিরতা তৈরি করা দিতে পারে সে। সকলে মিলে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা লোপ পেতে পারে। পৃথিবী জুড়ে রাজনৈতিক দলগুলি তাকে কাজে লাগাতে শুরু করেছে। গণতন্ত্র বলে হয়তো কিছু থাকবে না। সেই রাজতন্ত্রের মতো যে সিংহাসনে বসবে তাকে সরানো দায় হয়ে যাবে। ক্রমশ আধিপত্যবাদের হাতিয়ার হবে সে। মানুষ ক্রমশ অসহায় হয়ে পড়বে বলেই মনে করছেন অনেকে। কৃত্রিম মেধা ক্রমশ কুক্ষিগত হবে কতিপয় ব্যক্তি বা শক্তির হাতে। এর ফলে সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি, গোঁড়ামি বলবত হবে সমাজে রাষ্ট্রে দমনপীড়ন মূলক সেনসরশিপ এবং নিয়মিত নজরদারির মাধ্যমে।
এটা সত্য যে মানুষ ক্রমশ কৃত্রিম মেধার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। ভালো মানুষ তাকে ভালো কাজে লাগবে, আর খারাপ মানুষ খারাপ কাজে তাকে ব্যবহার করবে।
কম্পিউটার বিজ্ঞানে অসাধারণ অবদানের জন্য ২০১৮-য় টুরিং পুরস্কার জিতেছিলেন যৌথভাবে ড. জিওফ্রে হিন্টন, অধ্যাপক বেঙ্গিও এবং অধ্যাপক ইয়াস লেকান। এদের তিনজনকে বলা হয় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের গড ফাদার। এঁদের মধ্যে প্রথম দু’জন কৃত্রিম মেধার ভবিষ্যৎ ধ্বংসাত্মক চেহারা দেখতে পেলেও তৃতীয়জন এই আশঙ্কাকে অবাস্তব বলে উড়িয়ে দিচেছন। বলতে গেলে এই নিয়ে বিজ্ঞানী মহল স্পষ্ট দু’ভাগ হয়ে গেছে। বিরুদ্ধবাদীদের মত, কৃত্রিম মেধার যত উন্নতি হবে ততই একদেশদর্শী মতবাদকে আরও ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বড় করে তুলবে। এমন বৈষম্যের সৃষ্টি করবে যার প্রতিষেধক পাওয়া যাবে না। বিকৃত ইতিহাস, ভুল ভাল তথ্য, অনিষ্টকর সংবাদ, অনৈতিক পদক্ষেপের রমরমা পড়বে। বাস্তবতা লোপ পাবে, জনগণের আস্থা টাল খাবে এবং বৈষম্য আরও বৃদ্ধি পাবে বই কমবে না সমাজে। ডিজিটাল জগতে যারা বঞ্চিত শ্রেণি তাদের অসুবিধা হবে সবচেয়ে বেশি। এখনও মানুষের ইতিহাস, মানুষের এ যাবৎ প্রাপ্ত অভিজ্ঞতার যথেচছ ব্যবহার করতে পারে কৃত্রিম মেধার নানা উপকরণ। কৃত্রিম মেধার অনুকরণ করতে পারে মানুষের তৈরি পাঠ্য, শিল্পকলা, সঙ্গীত ইত্যাদি আর এই কৃত্রিম মেধা যার হাতে থাকবে সে অচিরেই জনসম্পদ একার ঝুলিতে ভরে নিতে সচেষ্ট হবে। সরকারি সম্পত্তি সহজেই হস্তগত হবে বেসরকারি কিছু সংস্থা বা ব্যক্তির। ২০২৩-এর মার্চ মাসে টেসলার কর্তা ইলেন মাস্ক ও অন্যরা একটি খোলা চিঠিতে প্রশ্ন তুলেছিলেন— আমরা কী এমন অমানবিক মন তৈরি করব যা ভবিষ্যতে আমাদের সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে নিঃস্ব করে দেবে। AI প্রযুক্তির অত্যাধুনিক সংস্করণ তৈরি করা উচিত কী না সে নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
নতুন করে যে দাবিটা উঠেছে সেটা AI-র সম্ভাব্য অপপ্রয়োগ নিয়ে আলোচনা শুরু করার। এমন প্রস্তাবও এসেছে পরমাণু শক্তির উপর যে রকম নিয়ন্ত্রণ বজায় আছে সেরকম সুপার ইন্টেলিজেন্সের ওপর নিয়ন্ত্রণ জারি করতে হবে। আই এ ই-র মতো একটি সংস্থা গড়া যায় কি না তাও খতিয়ে দেখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আর্টফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের বিধি ব্যবস্থা নিয়ে স্যাম অল্টমান ও গুগলের চিফ এক্সিকিউটিভ সুন্দর পিচাই এবং অন্যরা সম্প্রতি আলোচনা করেছেন সদ্য প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সুনকের সঙ্গে। তাঁর বক্তব্য, অর্থনীতি এবং সমাজের উপর সুপ্রভাবের দিকটির উপর জোর দিয়েছেন। প্যারালিসিস হওয়া ব্যক্তি হাঁটতে পারছে কৃত্রিম মেধার সাহায্যে, নতুন নতুন অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার হচ্ছে তবে দেখতে হবে এই কাজগুলো যাতে নিরাপদ ও সুরক্ষিত উপায়ে হয়। সুনক শীর্ষস্থানীয় শিল্পোন্নত দেশগুলির জি-৭ শিখর সম্মেলনেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। জি-৭ সম্প্রতি এ আই নিয়ে একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ তৈরি করেছে। যাতে করে এ আই পুরোপুরি অ-মানবিক না হয়।