ছোটোদের কথা
ছোটোদের কথা
সুধী,
অমর একুশের শুভেচছা। অমর একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে কারক নাট্য সম্প্রদায় আয়োজিত শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে বর্ণ লিখন প্রতিযোগিতা ‘‘এসো রক্তে জেতা বর্ণমালা সুন্দর করে লিখি’’ চৌদ্দ বছর অতিক্রম করতে যাচ্ছে। বিগত বছরগুলোর মত শিশু-কিশোরদের সাথে নিয়ে আপনার সপ্রাণ উপস্থিতি ও আন্তরিক সহযোগিতায় এ অনুষ্ঠান প্রাণবন্ত সফল হোক— এই কামনা করি।
ধন্যবাদান্তে
কারক নাট্য সম্প্রদায়-এর সকল ভাইবোন
২৩শে ফেব্রুয়ারি সকাল ৭টা থেকে ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের পাদদেশে কারক নাট্য সম্প্রদায়ের ভাইবোনদের ‘‘এসো রক্তে জেতা বর্ণমালা সুন্দর করে লিখি’’ বর্ণ লিখন এবং আল্পনা প্রতিযোগিতায় ছোটদের মধ্যে মিশতে পারার সুযোগ করে দেওয়ায় আমরা কারক-এর কর্মকর্তা ও ভাইবোনদের ধন্যবাদ জানাই। চিত্তাকর্ষক এই প্রতিযোগিতায় ছিল— প্রথম শ্রেণির নিচে, প্রথম শ্রেণি এবং দ্বিতীয় শ্রেণিতে পাঠরত শিশুদের জন্য সুন্দর করে বর্ণ লিখন, স্কুলে ভর্তি হয়নি কিন্তু এবছর ভর্তি হবে এদের জন্য হাতে খড়ি, শহিদ মিনার চত্বরে বিশাল আল্পনায় আল্পনার হাতে খড়ি। শিশুদের ‘হাতে খড়ি’ দেওয়ানোর জন্য বাবা-মা নতুন শ্লেট ও সাদা চক সহ তাদের ছেলেমেয়েদের নিয়ে উপস্থিত হন। তাদের হাতে খড়ি দেন ভাষা আন্দোলনের প্রবীণ ভাষা সৈনিকৃবন্দ। ভাবতে পারিনি যে এই অনুষ্ঠানে সামনাসামনি আলাপ করার সুযোগ পাব মাতৃভাষার জন্য যাঁরা জীবন মরণ পণে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন ৫২-এর ভাষা আন্দোলনে তাঁদের কয়েকজন প্রবীণ এবং শ্রদ্ধেয় ভাষা সৈনিকের সঙ্গে। এবারে উপস্থিত ছিলেন এম. আর. আকতার মুকুল, কাজী আবুল কাসেম, ইমদাদ হোসেন, আব্দুল মতিন, গাজীউল হক। বয়সের ভারে প্রবীণ হলেও এরা এখনো মনে মনে সবুজ তাই প্রতি বছর কারকের ডাকে ছোটদের উৎসাহিত করতে, উদ্দীপ্ত করতে, বাংলা ভাষাকে ভালবাসতে শেখাতে এরা এসে হাজির হন এই শহিদ মিনারের পাদদেশে ছোটদের অ আ ক খ-এর হাতে খড়ি দেবার জন্য। কারকের অনুরোধে আমরাও দু’জনে ছোটবন্ধুকে হাতে খড়ি দেওয়ালাম। অভিভাবকদের মধ্যে দেখলাম এক বিরল আবেগঘন অনুভূতি। ভাষা আন্দোলনের কিংবদন্তী ভাষা সৈনিকের হাতের স্পর্শে নিজের ছেলেমেয়ের বাংলা বর্ণ লিখনের হাতে খড়ি হচ্ছে এ যেন তাদের কাছে পরম প্রাপ্তি। আশা করি এই আবেগ বাংলাদেশের ঘরে ঘরে চির জাগরুক থাকুক।
এরপর তিনটি বিভাগে বর্ণ লিখন প্রতিযোগিতা, আল্পনার হাতে খড়ি প্রতিযোগিতা হল। সারগম ললিতকলা একাডেমীর শিল্পীবৃন্দ পরিবেশন করলেন বাংলা ভাষার গান। পরিবেশিত হল ‘‘তাক-দুম-তাক দুম বাজে বাংলা দেশের ঢোল’ শিশু-কিশোরদের যেমন খুশী নাচের অনুষ্ঠান।
তারপর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। পুরস্কার বিজয়ীদের মধ্যে কয়েকজনের হাতে ছোটদের কথা’র পক্ষ থেকে তুলে দিলাম, ছোটদের কথা এবং ছোটদের কথা প্রকাশনী’র ছোটদের বই— তপোবন পাঠশালা, কাক চড়াইয়ের ছড়া, ইতিহাসমালার গল্প, রাত দুপুরে অদ্ভুতুরে, আয় আয় চাঁদমামা।
কারক-এর বন্ধুরা আমাদের গলায় পরিয়ে দিল তাদের সুদৃশ্য পদক। ছোট্ট বন্ধু অন্তরা মেহরূখ আজাদ আমাদের উপহার দিল ভাষা আন্দোলনের প্রতীক নিয়ে তার নিজের আঁকা একটি সুন্দর ছবি। বাংলাদেশে এটি আমাদের শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি। আলাপ হল অনেক ছোট বন্ধুদের এবং তাদের বাবা-মার সঙ্গে। এদের মধ্যে সংযুক্তা, অঙ্গন, রাশেদ, আবুল ও কণা এবং তাদের ছোট্ট কন্যা তিলোত্তমা পানকৌড়ি, খাদিজা রহমান এবং তার পুত্র রাশিদুল হাসান (জুনায়েত), শহীনা আক্তার, তনুশ্রী সাহা, পুতু, আরিফ হায়দার ও তার স্ত্রী কবিতা প্রমুখের সান্নিধ্য এবং আন্তরিকতা ভুলবার নয়।
ছোটদের কথা’য় লেখা ছবি পাঠাতে আমন্ত্রণ জানালাম সবাইকে।
পরিশেষে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করব না কারকের কর্ণধার ভ্রাতৃপ্রতিম শংকরকে। তার জন্য থাকছে আমাদের অসীম প্রীতি ও শুভেচছা।
ছোটদের কথা, বর্ষ-২৯, সংখ্যা-৪, মার্চ ২০০১ থেকে পুনর্মুদ্রিত