ছোটোদের কথা
ছোটোদের কথা
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী
আমি কি ভুলিতে পারি॥
ছেলে হারা শত মায়ের অশ্রু গড়া এ ফেব্রুয়ারী
আমি কি ভুলিতে পারি॥
আমার সোনার দেশের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী
আমি কি ভুলিতে পারি॥
এই গান আজ শুধু বাংলাদেশের ভাইবোনদের গান নয় বরং আজ বিশ্বের সমস্ত বাঙালীর গান, সমস্ত দেশের মাতৃভাষাপ্রেমীদের গান।
১৯৫২ সালে ২১শে ফেব্রুয়ারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মাতৃভাষা বাংলার জন্য আত্মত্যাগী সংগ্রামে শহিদ রফিক, বরকত, জব্বর, শফিউর, সালামদের আত্মত্যাগের এ বছরে ৭৩ বছর পূর্তি হচ্ছে। ভাষা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধু সেখ মুজিবর রহমানের স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মের মধ্য দিয়ে বিশ্বের দরবারে বাংলা ভাষা একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র ভাষায় পরিণত হয়।
অত্যন্ত দুঃখের বিষয় বাংলাদেশে এবছর ২১শে ফেব্রুয়ারির সেই গৌরব গাথাকে মুছে দেবার ভয়ানক মৌলবাদী ষড়যন্ত্র চলছে। আমরা বিশ্বাস করি বাংলাদেশের আপামর সাধারণ মানুষের সম্মিলিত সংহতি ও শক্তি এই মৌলবাদী ষড়যন্ত্রের আক্রমণ প্রতিহত করে সে দেশের মাতৃভাষা বাংলা ভাষার গৌরব রক্ষা করবেন।
১৯৯৯-এর ১৭ই নভেম্বর ইউনেস্কোর অধিবেশনে মাতৃভাষার জন্য বাংলাদেশের ভাষা শহিদ দিবস ২১শে ফেব্রুয়ারীকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বিশ্বের ১৮৮ দেশে প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারী মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। সরকারী, বেসরকারী স্তরে দেশে দেশে মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। মাতৃভাষার উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়। কিন্তু ইউনেস্কো থেকে পৃথিবীর প্রধান, অপ্রধান সব ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য এই প্রয়াস প্রশংসনীয় হলেও অসংখ্য ছোট ছোট জাতির মাতৃভাষা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আজ বিশ্বায়নের আগ্রাসনে বিশ্বের বড় বড় ভাষাও আক্রান্ত। বাজার অর্থনীতির গ্রাসে মাতৃভাষা আর মাতৃদুগ্ধ নয়। মাতৃভাষা ক্রমাগত ‘কাজের ভাষা’ ইংরেজীর কাছে পরাভবের মুখে। আজ আমরা ‘আমার শিশুটি বাংলা জানে না’ বলতে গর্ববোধ করি। একুশে ফেব্রুয়ারি পালন তাই অনেকটা দ্বিচারিতা বলে মনে হয়। ইংরেজি শিখতে হলে নিজের মাতৃভাষা ভুলে যেতে হবে এর কোন বৈজ্ঞানিক যুক্তি নেই। তাই আমাদের আবেদন ইংরেজীতে পড়ুক কিন্তু মাতৃভাষার বিনিময়ে নয়।