ছোটোদের কথা
ছোটোদের কথা
শীতের বুড়ি-জুজু বুড়ি শীত দিও না বেশি;
আমার দিদির বিয়ে হবে থাকব হাসি খুশি।
ছই গাড়িতে রওনা দেবো কাঁথা-কম্বল নিয়ে,
মাঘের মাসে দিন যে আছে গৌরী দিদির বিয়ে॥
তখন আমি খুবই ছোট বয়স ৭-৮ হবে। যাত্রাপথ শুভ হবে কি অশুভ, তা ঈশ্বরই জানেন। ভয়ঙ্কর সে পথ। অন্ধকার, জঙ্গল ঘেরা। ছই বাঁধা গরুরগাড়ি চলেছে। ভিতরে যাত্রী চার কি পাঁচ হবে। গন্তব্য— পাড়াম্বুয়া গ্রাম, হুগলী জেলা। যতদূর দৃষ্টি যায় ঘন জঙ্গল আর জঙ্গল! যদি কোন ডাকাত বা বন্যজন্তু যেমন বাঘ লুকিয়ে থাকে তো কথাই নেই। কারণ ঐ অঞ্চলে বাঘের খুব উপদ্রব চলছে, শোনা যাচ্ছিল বাঘের ডাক ও বিচরণ!
গ্রামবাসীগণ দুঃশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটাতেন। তাই চিন্তা দূর করতে বনের মধ্যে একটা বাঘ ধরার কল ঐ রাস্তার ধারে রাখা ছিল; কলের ভিতরে একটা বাচ্ছা ছাগল ছানা। কারণ ছাগল ছানার চিৎকারে নিশ্চয় বাঘের অনুসন্ধিৎসা বাড়বে। ইতিমধ্যে আমাদের গোযান যতই বনের ভিতর দিয়ে চলতে শুরু করেছে, ততই গাড়োয়ান বলছে— ‘মায়েরা ঠাকুরের নাম করো, চুপচাপ বসো।’...
গভীর জঙ্গল, কিছু দূর থেকে ভেসে আসছে সেই ছাগ-শিশুর চিৎকার! কিছুদূর অগ্রসর হতেই দেখা গেল খাঁচার মধ্যে সেই ছাগল শিশুকে। আর্ত চিৎকার; —কে তাকে বাঁচাবে? কিছুক্ষণের মধ্যেই শেষ হলো আমাদের যাত্রাপথ। পৌঁছে গেলুম বিয়ে বাড়িতে; সবাই আনন্দে আত্মহারা! কিন্তু সেই ছাগ শিশু কি বাঘের জলখাবার প্রয়োজন মিটিয়ে ছিল? সে খবর কে রাখে?!