ছোটোদের কথা
ছোটোদের কথা
এক মুসাফির আপন খেয়ালে ছুটে চলেছে মহাশূন্যের পথে। তার চলার কোন ক্লান্তি নেই। ১৯৭৭ সালের ২০শে আগস্ট থেকে শুরু হয়েছে তার পথ চলা। এই মুসাফিরের নাম হল ভয়েজার টু। এটি একটি কৃত্রিম উপগ্রহ। উপগ্রহটি পৃথিবী থেকে তার পথচলা শুরু করে। ছুটে চলেছে বৃহস্পতির পাশ ঘেঁষে, শনির বলয়ের পাশ কাটিয়ে, ইউরেনাস এর গা ঘেঁসে মহাশূন্যের অজানা পথে। সে সাথে করে নিয়ে চলেছে পৃথিবীর নানান শব্দ— যেমন পাখির শব্দ, জল পড়ার শব্দ, সমুদ্রের উচ্ছ্বাস, বজ্রপাত, ঝড়ের শব্দ, তিমির গর্জন, বিভিন্ন দেশের গান, বিভিন্ন খাবার-দাবারের ছবি, বিভিন্ন মানুষের চিত্র ও তাদের কথাবার্তার ধরণ, নানা রকম ভঙ্গিতে খাওয়া-দাওয়া, এক মহিলা সুপার মার্কেটে বাজার করতে যাচ্ছে তেমনি ছবি ইত্যাদি। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক ধাঁচের ছবিও দেওয়া আছে।
ভয়েজার টু এর গোল্ডেন ডিক্স এর জন্য যে কমিটি গঠন করা হয়েছিল তারা সফলভাবে ১১৬টি ছবি ও বিভিন্ন ধরনের শব্দগুলিকে রেকর্ডের মধ্যে তুলে ধরেছেন। এই রেকর্ডটি পাঠিয়েছেন আমেরিকার নাসার বিজ্ঞানীরা। রেকর্ডটির নাম গোল্ডেন ডিক্স কারণ এই রেকর্ডটি গোল্ড প্লেটেড কপার দিয়ে বানানো, আর এর কভার বানানো হয়েছে অ্যালুমিনিয়াম ও ইউরেনিয়াম-২৩৮ আইসোটোপ দিয়ে। বিভিন্ন ধরনের শব্দ ও ছবি গুলি যদি ভিনগ্রহের কোন এলিয়ানের কাছে যায় বা গোল্ডেন রেকর্ডটি পায় তবে তারা বুঝবে পৃথিবী বলে কোন একটি নীলগ্রহ আছে। সেখানে মানুষ নামের এক উন্নত প্রাণী বাস করে। এই রেকর্ডটিকে বিজ্ঞানীরা বলছেন পৃথিবীর পক্ষ থেকে পাঠানো ভিনগ্রহীদের জন্য একটি উপহারস্বরূপ। এই রেকর্ডটি বানানোর জন্য বিজ্ঞানীদের চিন্তা ও চেষ্টার কোন ত্রুটি ছিল না। অ্যান ডুয়ান নামের এক লেখকের মস্তিষ্ক তরঙ্গ অর্থাৎ চিন্তাতরঙ্গকে এক ঘণ্টা ধরে রেকর্ড করা হয়েছে। এই চিন্তা তরঙ্গের মধ্যে ছিল পৃথিবীর সমস্যা সম্পর্কে ভাবনা, পৃথিবীর ইতিহাস, ভালোবাসার অনুভূতি ইত্যাদি। পৃথিবীর ৫৫টি বিভিন্ন ভাষায় মৌখিক সম্ভাষণ রেকর্ড করা আছে। এই ভাষার মধ্যে রয়েছে বাংলা, উর্দু, হিন্দি, ইংরেজি, ফরাসি ভাষা, আরবি, হিব্রু, করিয়ান, চাইনিজ, জাপানিজ ও প্রাচীন গ্রিক ভাষা। রেকর্ডে যখন সম্ভাষণ শুরু হবে তার ঠিক এক মিনিট ৮ সেকেন্ডের মাথায় বাংলায় শুরুতে শোনা যাবে ‘‘নমস্কার, বিশ্বের শান্তি হোক’’। বাঙালির এই ব্যারিটোন ভয়েসটি ছিল পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত রাজনীতিবিদ সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের।
এই রেকর্ডে ছবি, তথ্য, শব্দ ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়েছিল। তা নিয়ে ১৯৭৮ সালে প্রকাশিত হয় বিখ্যাত বই ‘‘মামার্স অফ আর্থ : দি ভয়েজার ইন্টারস্টেলার রেকর্ড’’। অনেক পরে, ২০১৫ সালে নাসা ওই রেকর্ডের অডিও অংশটা সাউন্ড ক্লাউডে দিয়েছে। এছাড়াও হলিউডে এই অভিযানের উপর দুটি মুভি করা হয়েছে। ১৯৮৪ সালে ‘স্টারম্যান’ ও ২০০০ সালে ‘ব্যাটল ফিড’। আর ওখানে অবশ্য কিছুটা কল্পকাহিনীর ওপর ভর করা হয়েছে এবং দেখানো হয়েছে ওই গোল্ডেন রেকর্ডটি ভিনগ্রহীরা পেয়েছে এবং পৃথিবীর সম্বন্ধে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। গল্প কাহিনীর পরিবর্তে এটাই যদি সত্য হয় তাহলে কোনদিন হয়তো ভিনগ্রহবাসীরা পৃথিবীতে চলে আসবে— পৃথিবী জয় করতে অথবা পৃথিবীর সাথে বন্ধুত্ব পাতাতে; হয় পৃথিবী ধ্বংস হবে নয় ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচবে।