ছোটদের কথা
ছোটদের কথা
বর্ধমান হরিসভা হিন্দু বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, প্রথম স্থান
মানুষ সহ অন্যান্য জীবের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক সুস্থতাকে অর্থাৎ প্রকৃতপক্ষে রোগমুক্ত অবস্থাকে সুস্বাস্থ্য বা স্বাস্থ্য বলে এবং সমস্ত জীবের চারপাশের পারিপার্শ্বিক অবস্থাকে পরিবেশ বলে। আমাদের চারপাশের মাটি, জল, হাওয়া, সমস্ত কিছু নিয়েই পরিবেশ। স্বাস্থ্য ও পরিবেশ একে অপরের সাথে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। সুস্থভাবে জীবন ধারণ করার জন্য একটি দূষণমুক্ত ও ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশের আবশ্যিকতা অপরিহার্য। বিভিন্ন প্রকারের পরিবেশ দূষণ যেমন— বায়ুদূষণ, জলদূষণ, মাটিদূষণ ও শব্দ দূষণ মানুষের স্বাস্থ্যের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। বায়ু দূষণের ফলে মানুষের হৃদরোগ, শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসে ক্যানসার সহ বিভিন্ন দুরারোগ্য রোগের সম্ভাবনা প্রবল হয়ে ওঠে। জলদূষণের ফলস্বরূপ মানুষের পেটের সমস্যা অর্থাৎ বিভিন্ন ব্যাধি, যকৃতের রোগ সহ বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে এবং মাটি দূষিত হওয়ায় বিভিন্ন খাদ্যশস্যের মাধ্যমে তা আমাদের শরীরে গৃহীত হচ্ছে এবং অনেক প্রকার রোগের সৃষ্টি করছে। শব্দদূষণের ফলস্বরূপ দিন দিন ক্রমশ কানে শুনতে না পাওয়া অর্থাৎ কানে কালা হয়ে যাওয়া মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বয়স্কদের হৃদরোগ দেখা দিচ্ছে অতিরিক্ত আওয়াজের ফলে। এছাড়াও পরিবেশের ভারসাম্যহীনতার পরিমাণ ক্রমশ বাড়ছে ফলে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটছে এবং জলবায়ুর পরিবর্তন, জীবপ্রজাতির সংখ্যা হ্রাস, বনভূমি ধ্বংস, বিশ্ব উষ্ণায়ণ ও জলের অভাব মানুষের জীবনযাত্রাকে দিনদিন কঠিন থেকে কঠিনতর করে তুলছে। যেমন— বনভূমি ধ্বংসের ফলে দিন দিন পৃথিবীর ভারসাম্য নষ্ট হচেছ ফলে বিভিন্ন ধরণের জীবাণুর বংশবৃদ্ধি ঘটায় স্বাস্থ্যহানি ঘটে চলেছে।
জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে ঋতুচক্র ব্যহত হচেছ। ফলে হঠাৎ বৃষ্টিপাত, অত্যধিক গরম ও মাত্রাধিক শৈত্যের কারণে মানুষের শরীর তাতে অভ্যস্থ হতে না পেরে অসুস্থ হয়ে পড়ছে এবং বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয় যেমন— সুনামি, খরা মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে চলেছে। পরিবেশে জীবপ্রজাতির সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার ফলে খাদ্যশৃঙ্খল ব্যহত হচেছ এবং মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা ও সুস্বাস্থ্য ব্যহত হচেছ। বনভূমির ধ্বংসের ফলস্বরূপ দিন দিন পৃথিবীপৃষ্ঠের উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়েই চলেছে ফলে মানুষের ঘরে ঘরে রেফ্রিজারেটার ও এয়ার কণ্ডিশনারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, এর ফলে পরিবেশে ক্লোরোফ্লুরো কার্বনের পরিমাণ বেড়েই চলেছে যা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত ওজন স্তরের ক্ষয় করে অতিবেগুনি রশ্মির প্রবেশ ঘটাচেছ পৃথিবীপৃষ্ঠে। ফলে পৃথিবীর মাটিতে এসে পৌঁছাচ্ছে অত্যন্ত ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি যা মানুষের ত্বকে ক্ষতের সৃষ্টি করছে এবং ত্বকে ক্যানসারও সৃষ্টি করছে যা মানুষের স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। জলের অপচয়ের কারণে বর্তমানে জলের অভাব দেখা দিচ্ছে, এর ফলে বহু মানুষ জলের অভাবে মারা যাচ্ছেন। কেউ কেউ জলের অভাবের কারণে দূষিত জল পান করায় বিভিন্ন রোগে পড়ছেন ফলে স্বাস্থ্যহানি ঘটছে। পরিবেশ দূষণ রোধে ও সুস্বাস্থ্য গড়ে তুলতে আমাদের সকল বিশ্ববাসীকে নিজেদের মতো করে প্রচেষ্টা করতে হবে। প্রত্যেককে গাছ লাগাতে হবে, জলের সাশ্রয় করতে হবে এবং যথাসম্ভব কম পরিবেশ দূষণ ঘটানোর প্রচেষ্টা করতে হবে।
সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলিকে পরিবেশ দূষণ কমিয়ে পরিবেশ রক্ষায় সচেষ্ট হতে হবে। স্বাস্থ্যকে আমরা সকলেই সম্পদ বলে মানি; ঠিক তেমনই পরিবেশও যে আমাদের মূল্যবান এক সম্পদ তা উপলব্ধি করে, আমাদের সকল বিশ্ববাসীকে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ-এর সুন্দর পরিবেশ ও সুস্বাস্থ্য গড়ে তোলার লক্ষ্যে এগিয়ে আসতে হবে। পরিবেশের সাথে স্বাস্থ্য যে গভীর ভাবে সম্পর্কযুক্ত এবং একে অন্যের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত তা মানুষকে উপলব্ধি করতে হবে এবং পরিবেশকে রক্ষা করতে হবে। তবেই আমাদের সকলের সুস্বাস্থ্য বজায় থাকবে।