ছোটদের কথা
ছোটদের কথা
দশম শ্রেণি, বর্ধমান আদর্শ বিদ্যালয়, দ্বিতীয় স্থান
‘‘স্বাস্থ্যই সম্পদ’’— এই প্রাচীন বাণীটি আজ যেন আরও বাস্তব। কিন্তু প্রশ্ন হল, শুধু কি শরীরচর্চা এবং ওষুধের মাধ্যমেই লাভ করা যায় এই সম্পদ? না, একটি সুস্থ দেহের পেছনে লুকিয়ে আছে স্বাস্থ্যবান এবং ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশ। যেখানে বাতাসে নেই বিষ, জলে নেই প্লাস্টিক, মাটিতে নেই বিষাক্ত রাসায়নিক— সেখানে স্বাস্থ্য জন্ম নেয় আপন ছন্দে।
“The environment is where we all meet; where; we all have mutual interest”— বলেছিলেন লেডি বার্ড জনসন। কিন্তু আজ সেই পরিবেশই যদি আমাদের ক্ষতি করে, তবে আমাদের স্বাস্থ্যের ভবিষ্যত কতটাই না অনিশ্চিত!
আমাদের শরীর ছন্দ হারায় যখন গাছ কেটে ফেলা হয়, নদীর জল শুকিয়ে যায়, শহর ঢেকে যায় কালো ধোঁয়ায়। আমাদের নিজেদের হাতে গড়া বিষে যেন আমরা নিজেরাই বিষাক্ত হয়ে পড়েছি। আমরা, তথা সম্পূর্ণ মানব সভ্যতার ভবিষ্যত নির্ভর করে আমাদের চারপাশে গড়ে ওঠা পরিবেশের উপর। সকালের প্রথম নিঃশ্বাস, শিশুর অনাবিল হাসি, বৃদ্ধের হাঁটার ছন্দ— সবটাই নির্ভর করে শান্ত ও ভারসাম্যময় প্রকৃতির উপর। তবে বর্তমান যুগে মানবসভ্যতা তথা আমরা উন্নয়নের দৌড়ে এতটাই প্রাণহারা হয়ে পড়েছি, যে আমরা ভুলেই যাচ্ছি— এই উন্নয়নই যদি প্রকৃতি ধ্বংসের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়, তবে সেই উন্নয়ন আমাদের বাঁচাবে না, বরং আরও এগিয়ে দেবে ধ্বংসের দিকে।
আমরা কর্মজীবনে নিজ স্বাস্থ্য লাভের জন্য কতই না ক্ষতি করি পরিবেশের। গাছপালা কেটে ফেলে কলকারখানা নির্মাণ থেকে চাষের ক্ষেতে বিষাক্ত রাসায়নিক ব্যবহার। আমাদের অমানবিকতার কারণে কতই না জীবন ধ্বংস হচেছ। কত পশু-পাখি অগ্রসর হচ্ছে বিলুপ্তের পথে। কলকারখানার ও যানবাহন নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়ার জন্য আজ ওজন স্তর ক্ষতির মুখে। ফলে বাড়ছে বিশ্ব উষ্ণায়ণ (global warming) এবং ভারসাম্য নষ্ট হচেছ আমাদের ঘিরে থাকা প্রকৃতির। প্রকৃতি ছাড়া মানবসভ্যতার অগ্রগতি অসম্ভব। একটি সুন্দর পরিবেশই গড়ে তুলতে পারে প্রকৃত স্বাস্থ্য। এবং এমন পরিবেশ পেতে হলে, করতে হবে বৃক্ষরোপন, আমাদের ঘিরে থাকা প্রকৃতিকে ভালোবাসতে হবে। দয়াশীল এবং মমতাবান হতে হবে পরিবেশের প্রতি। সচেতন হতে হবে জলবায়ুর প্রতি এবং মনে রাখতে হবে পরিবেশই হল নীরব চিকিৎসক। সে আমাদের চিকিৎসা দান করে আলো, বাতাস, সবুজ, জল এবং শান্তির স্পর্শে এবং আজ এই ধ্বংসের দ্বারে, পরিবেশকে কুর্ণিশ করতে হবে, দাঁড়াতে হবে তার পাশে।
মনে রাখতে হবে, স্বাস্থ্য শুধু সম্পদই নয়, বরং সমাজের, দেশের তথা সমগ্র ভবিষ্যত প্রজন্মের এক পুঁজি এবং একটি স্বাস্থ্যবান জীবন লাভের জন্য প্রকৃতিকে ভালোবাসা আবশ্যক।