ছোটদের কথা
ছোটদের কথা
স্নেহের ছোট্ট বন্ধুরা,
তোমাদের কাছে এই সংখ্যায় শিশু প্রিয় এক কবি বন্ধুকে পরিচয় করিয়ে দেব এবং শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করব আগামী ২০শে জুলাই তাঁর ১২৪তম জন্মদিনটি, তাঁর ছড়া আর বিভিন্ন কবিতা পাঠ আবৃত্তির মধ্য দিয়ে। সুনির্মল বসু ১৯০২ সালে (বঙ্গাব্দ ১৩০৯, ৪ শ্রাবণ) তৎকালীন বিহারের বর্তমানে ঝাড়খন্ডের গিরিডি শহরে জন্মগ্রহণ করেন তাঁর মাতুলালয়ে এবং পিতার কর্মস্থলে। তঁার পিতার নাম পশুপতি বসু এবং মাতার নাম লীলাবতী দেবী। সেদিন ছিল শ্রাবণের পূর্ণিমা তাই প্রথমে তাঁর নাম রাখা হয়েছিল নির্মল চন্দ্র। পরে সেটা রাখা হয় সুনির্মল। তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল অবিভক্ত ভারতের ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের মালখাঁনগর। সাংবাদিক ও সাহিত্যিক গিরিশচন্দ্র বসু ছিলেন তাঁর পিতামহ এবং বিপ্লবী ও সাহিত্যিক মনোরঞ্জন গুহঠাকুরতা ছিলেন তাঁর মাতামহ। ছোটবেলায় সাঁওতাল পরগণার সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ তাঁর মনে কবিতা রচনার অনুপ্রেরণা জাগায়। তাঁর প্রথম কবিতা ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। পিতার কর্মস্থল পাটনার গিরিডি স্কুল থেকে ১৯২০ সালে তিনি ম্যাট্রিক পাশ করেন। তারপরে কলকাতার সেন্টপলস্ কলেজে ভর্তি হন। ১৯২১ সালে গান্ধীজীর অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়ে কলেজ ত্যাগ করেন। পরে অবনীন্দ্রনাথ প্রতিষ্ঠিত আর্ট কলেজে ভর্তি হন। কর্মজীবনে ছোটদের জন্য শিশু সাহিত্যকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। ছোটদের জন্য ছড়া, কবিতা, গল্প, কাহিনী, উপন্যাস, ভ্রমণ কাহিনী, রূপকথা, কৌতুক নাট্য প্রভৃতি শিশু ও কিশোরদের উপযোগী বিষয়ক রচনায় তিনি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। তাঁর প্রথম প্রকাশিত কবিতা গ্রন্থের নাম ‘হাওয়ার দোলা’। তদানীন্তন একমাত্র কিশোর পাক্ষিক পত্রিকা ‘কিশোর এশিয়া’র তিনি ছিলেন একমাত্র পরিচালক। দিল্লীতে প্রবাসী বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের শিশু সাহিত্য শাখার সভাপতিত্ব করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ— ‘ছানাবড়া’, ‘বেড়ে মজা’, ‘হৈ চৈ’, ‘হুলুস্থুল’, ‘কথা শেখা’, ‘পাতকড়ি’, ‘মরণের ডাক’, ‘ছন্দের টুংটাং’, ‘আনন্দ নাড়ু’ ‘শহুরে মামা’, ‘কিপ্টে ঠাকুরদা’, ‘বীর শিকারী’, ‘কবিতা শেখা’, ‘ছন্দের গোপন কথা’, ‘আমার ছড়া’ প্রভৃতি। সম্পাদিত গ্রন্থ ‘ছোটদের চয়নিকা’, ‘ছোটদের গ্রন্থ’, ‘ছোটদের গল্প সঞ্চয়ন’। তিনি শিশু সাহিত্যে ১৩৩৩ বঙ্গাব্দ, ১৯২৬ সালে ভূবনেশ্বরী পদক পান। ১৯৫৭ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারি ঢাকুরিয়ায় শেষ নিঃশ্বাস তাগ করেন।