ছোটদের কথা
ছোটদের কথা
বিষ্ণুশর্মার সুদর্শন রাজার গল্প বলেছি তোমাদের। বিষ্ণুশর্মার জন্ম হয়েছিল কাশ্মীরে। তিনি কাশ্মীরের পণ্ডিত সম্প্রদায়ের মানুষ ছিলেন। ভাগ্যান্বেষণে বেনারস এসেছিলেন। ‘‘পঞ্চতন্ত্র’’ সংস্কৃত শব্দ। ‘পঞ্চ’ অর্থাৎ পাঁচ, ‘তন্ত্র’ অর্থাৎ ‘নীতি’। পাঁচটি নীতি হল : মিত্রভেদ (বন্ধুদের মধ্যে বিচেছদ। সামান্য ভুল বোঝাবুঝি ও অবিশ্বাসজনিত কারণে যখন বন্ধুত্ব নষ্ট হয়)। মিত্রলাভ (বন্ধুলাভ। সঠিক বন্ধুত্ব পাওয়া, বন্ধুত্ব স্থাপন এবং সেটা রক্ষা করা)। কাকোলুকীয়ম (চিরশত্রুতা। কাক ও পেঁচার মধ্যে চিরশত্রুতা। একজন দিন ও অপরজন রাত্রে রাজত্ব করে। কাক+অলুক, অলুক কথার মানে যা দিনের বেলায় দেখা যায় না। পেঁচা দিনের বেলায় দেখা যায় না, সেইজন্যই কাক ও পেঁচার সঙ্গে সম্পর্ক চিরশত্রুতা)। লব্ধপ্রণাশম (পেয়ে হারানো। কোনো কিছু লাভ করেও তাঁর নিজের অবহেলার কারণে বা অদূরদর্শীতার কারণে নষ্ট করে ফেলা) এবং অপরীক্ষিতকারকম (হঠকারিতা। পরীক্ষা না করে কোনো কাজ করা, যে কোনো কাজ করার আগে সেই বিষয়ে ভালভাবে সতর্ক হয়ে বা চিন্তা করে কাজটি না করা)। বিষ্ণুশর্মা তাঁর গল্পগুলিতে প্রধানত এই পাঁচটি নীতিতে সমৃদ্ধ করতে চেয়েছেন আমাদের। আমরা ক্রমশ সেগুলো নিয়ে আলোচনা করবো।
আজ তোমাদের বিষ্ণুশর্মার হাতি আর ইঁদুরের গল্প বলবো।
ভূমিকম্পে একবার একটা গ্রামের খুবই ক্ষতি হয়। গ্রামের মানুষ সবাই গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। ইঁদুরগুলো ভাবল ভালোই হলো আমরা এবার নিরুপদ্রবে গ্রামে বাস করতে পারব। যার যেখানে খুশি ঘরবাড়ি তৈরি করে তারা বাস করতে থাকে। কিন্তু কিছুদিন পর একটা বিশাল সমস্যা টের পেল। গ্রামের পাশে একটা দিঘি ছিল। জঙ্গলের হাতিরা সেই দিঘিতে স্নান করতে, জল খেতে যায়। যাবার পথে ইঁদুরদের ঘরবাড়িগুলো ওদের পায়ে মাড়িয়ে গুঁড়িয়ে যায়। অনেক ইঁদুরও মারা যায়। ইঁদুররা মিলে তাদের রাজাকে ধরলো, একটা বিহিত করতে হয়! অগত্যা ইঁদুরদের রাজা হাতিদের রাজাকে গিয়ে সেলাম ঠুকল।
হাতিরাজা মুচকি হেসে বললেন, কী ব্যাপার! সেলাম ঠুকছ? ইঁদুর রাজা কিচিরমিচির স্বরে নিবেদন করলো আপনারা ওই দিঘিতে যাওয়া আসার পথটা যদি পরিবর্তন করেন, তাহলে আমাদের ছানাপোনারা প্রাণে বেঁচে যায়। আপনাদের যাওয়া আসার জন্য ওরা চাপা পড়ে মারা যাচ্ছে।
হুম বুঝলাম! তোমাদের আবেদন বিবেচনা করা যাবে। হাতি রাজা ইঁদুরদের রাজাকে আশ্বস্ত করল। ইঁদুরদের রাজা তখন খুব খুশি হয়ে বলল, আপনি যারপরনাই উপকার করলেন। আমার উপকার করবে নেংটি ইঁদুর! আমরা হলাম বিশালাকায় প্রাণী! আমাদের পায়ের চাপে মেদিনী কেঁপে ওঠে!
কী আর করবে, নেংটি ইঁদুরের দল মুখ চুন করে ঘরে ফিরল। তবে তাদের সমস্যা মিটেছে। হাতিরা অন্য পথে দিঘিতে যাওয়া আসা করে।
একদিন হাতিদের দলের মিলিত চিৎকারে ইঁদুরেরা চমকে উঠলো। আকাশ যেন ফেটে যাচ্ছে। কী ব্যাপার? দৌড়ে এসে দেখে হাতিরা সবাই শিকারিদের জালে আটকা পড়েছে। মোটা মোটা দড়ির জাল তারা না পারছে ছিঁড়তে, না পারছে নড়াচড়া করতে।
ইঁদুরের রাজা তখন একছুটে হাতিরাজার কানের কাছে গিয়ে বলল, ভয় পাবেন না, আমাদের দল তৈরি! এক্ষুনি জাল কেটে দিচ্ছি!
ইঁদুরের দল নিমেষে জালের মোটা মোটা দড়িগুলো দাঁত দিয়ে কেটে দিল। পরিত্রাণ পেয়ে হাতিদের রাজা তো খুব খুশি। সকলের বিপদ কেটে গেছে। ইঁদুরদের এবার সাবাশী জানাতেই হয়!
গল্পের মূল শিক্ষা, নগণ্য হলেও উপেক্ষা নয়, বিপদের বন্ধুই প্রকৃত বন্ধু। গল্প তোমাদের কেমন লাগছে চিঠিতে জানাবে।