ছোটদের কথা
ছোটদের কথা
নবম শ্রেণি, বর্ধমান নিবেদিতা কন্যা বিদ্যালয়, তৃতীয় স্থান
ভূমিকা : স্বাস্থ্য শুধুমাত্র রোগ থেকে মুক্তি নয়, স্বাস্থ্য হল ব্যক্তির শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক গুণাবলির এমন একটি সমন্বয় যা তাকে পরিপূর্ণ জীবনযাপনে সহায়তা করে। স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য পরিবেশের ভূমিকা অনস্বীকার্য কিন্তু আমরা মানব সমাজ পরিবেশকে ক্রমাগত ধ্বংস করে চলেছি।
মানব স্বাস্থ্য পরিবেশের সম্পর্ক : স্বাস্থ্য ও পরিবেশের এক সরল সম্পর্ক রয়েছে। পরিবেশ ভালো থাকলে মানুষ সুস্থ থাকবে এবং মানুষ সুস্থ থাকলে, মানুষের সুস্থ মানসিকতার উদ্ভব হলে মানুষ পরিবেশ সচেতনতার মাধ্যমে পরিবেশকে ভালো রাখবে।
পরিবেশের ভূমিকা : পরিবেশ আমাদের সবকিছু দিয়েছে। কিন্তু আমরা তাকে প্রতিনিয়ত দূষিত করছি। এই পরিবেশ প্রকৃতির দান। এই পরিবেশ আমাদের নিঃশ্বাসের জন্য অক্সিজেন, খাওয়ার জন্য খাদ্য, মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে নির্মল পরিবেশ, জ্বালানির জন্য কাঠ ইত্যাদি সবকিছুই নিঃস্বার্থে দান করে।
নির্মল পরিবেশ : আমাদের সুস্থ থাকার জন্য প্রয়োজন পরিষ্কার-পরিচছন্ন নির্মল পরিবেশ। এই পরিবেশ প্রকৃতির দান এবং তাকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব আমাদের মানব সমাজের। তাই আমাদের প্রত্যেককে শপথ গ্রহণ করতে হবে পরিবেশকে সুস্থ রাখার। এতে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।
বর্জ্য নিষ্কাশন ও প্লাসটিক বর্জন : পরিবেশকে পরিচছন্ন রাখতে সর্বপ্রথম আমাদের প্লাসটিক বর্জন ও বর্জ্যরে সঠিক নিষ্কাশন করতে হবে। প্লাসটিক আমাদের পরিবেশে না মিশে পরিবেশকে দূষিত করে পরিবেশ ও মানব জীবনে প্রভাব ফেলেছে। এর জন্য আমাদের প্রথমে বর্জ্যকে শনাক্তকরণ করে তারপর সেটিকে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে।
দূষণ মুক্তিকরণ : মাটিদূষণ, জলদূষণ, বায়ুদূষণ ও শব্দদূষণের কুপ্রভাব আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ছাপ ফেলেছে। এই দূষণ বন্ধ করার জন্য আমাদের প্লাসটিক ব্যবহার, যানবাহনের ব্যবস্থা, লাউড স্পিকারের ব্যবহার ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রশাসনিক স্তরেও ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন।
স্যানিটারি ল্যাট্রিন : মল-মূত্র পরিত্যাগ করার জন্য স্যানিটারি টয়লেটের প্রচলন করতে হবে। কারণ আমরা এখন উন্নত হয়েছি, তাই আমাদের উন্নয়নের মাত্রাও বৃদ্ধি করতে হবে।
ডাস্টবিন ব্যবহার : আমাদের বর্জ্যকে শনাক্তকরণ করে সমজাতীয় বর্জ্যকে এক জায়গায় ফেলতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের একাধিক ডাস্টবিন ব্যবহার করতে হবে, কারণ আমরা দৈনন্দিন জীবনে একাধিক ধরণের জিনিসপত্র ব্যবহার করতে থাকি, তাই আমাদের বর্জ্যরে জন্য সঠিক ডাস্টবিন ব্যবহার করতে হবে।
ব্যক্তিগত পদক্ষেপ : আমাদের সকলকে ব্যক্তিগত পদক্ষেপ নিয়ে পরিবেশকে দূষণমুক্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে। এর জন্য সর্বপ্রথম আমাদের বাড়িতে প্লাস্টিক, এয়ার কন্ডিশনার, রেফ্রিজেটর, দূষণকারী যানবাহন এসবের ব্যবহার কমিয়ে সাধ্য মতো বনসৃজন করতে হবে। বাড়ির বর্জ্য যেন কোথাও মিশে দূষণ না ঘটায় সেইদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। এতে আমাদের স্বাস্থ্যে ভালো প্রভাব পড়বে।
পরিবেশ সচেতনতা মূলক অনুষ্ঠান : আমরা এখন ছাত্রছাত্রী তাই এই পরিবেশ ও মানব স্বাস্থ্য ভালো রাখার দায়িত্ব আমাদের। আমরা শিক্ষিকাদের সাহায্য নিয়ে বিভিন্ন পরিবেশ সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান, সেমিনার, র্যালির মাধ্যমে মানুষের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা গড়ে তুলতে পারি। আমাদের সমাজে অনেকেই আছেন যাদের অক্ষরজ্ঞান কম, তারাও এই অনুষ্ঠানের অংশ হলে, তাদেরও পরিবেশ ও স্বাস্থ্য সম্পর্কে ধারণা জন্মাচ্ছে।
ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা : পরিবেশকে পরিষ্কার রাখতে হলে আমাদের নিজেদের পরিষ্কার থাকতে হবে। এতে আমাদের স্বাস্থ্য ও পরিবেশকে ভালো রাখা যাবে।
উপসংহার : বনসৃজন, কৃষিক্ষেত্রে রাসায়নিকের ব্যবহার কমানো, খাবারে ব্যবহৃত রং নিষিদ্ধকরণ, যানবাহন নিয়ন্ত্রণ, প্লাস্টিক বর্জন করতে হবে। এতে আমরা সুস্থ থাকব অর্থাৎ আমাদের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। এর জন্য শুধুমাত্র দেশে নয় আন্তর্জাতিক স্তরেও ব্যবস্থা নিতে হবে।