ছোটদের কথা
ছোটদের কথা
রোজ ভোরে পাখির ডাকে ঘুম ভেঙে যায় ছোটনের। ঘুম ভেঙে গেলে আর শুয়ে থাকতে ভালো লাগেনা তার। চোখেমুখে জল দিয়ে বাইরে এসে হাঁটা দেয় সবুজ গাছগাছালির দিকে। পাহাড়ের কোলে ঘন সবুজের মাঝে জনা কুড়ি পরিবারের এক জনবসতি।
ঘন সবুজের মাঝে ঘোরাঘুরি করতে ছোটনের খুব ভালো লাগে। দাদুর কাছে ছোটন শুনেছে পাহাড়ের কোলের এই সবুজ বনে আছে অনেক রকমের পশু-পাখি-ফুল ও লতাপাতা। অনেক রকমের ওষধি লতাপাতাও আছে এই সবুজের মাঝে। দাদু মাঝে মাঝে যায় সেই ওষধি লতাপাতা জোগাড় করতে। ছোটনও গেছে কয়েকবার দাদুর সাথে। বনের বেশ গভীরে। সেখানে যেন রোদ আসায় মানা। কেবল যেন ভিজে ভিজে চারিপাশ। দাদু বলছে বড়ো বড়ো জানোয়ার বনের এইরকম গভীরে থাকে।
একা-একা কোনদিন ছোটন বনের গভীরে যায়না। বনে ঢোকার একটু পরেই সবুজের মাঝে বসে থাকতে থাকতে ছোটন পেয়েছে বানর, খরগোশ, সজারু ও নানারকম পাখিদের দেখা। একবার বিশাল এক হাতিকে দেখেছিল হেলতে দুলতে চলে যেতে। সেদিন ছোটন ভয়ে গাছের আড়ালে লুকিয়ে ফেলেছিল নিজেকে। দাদুর কাছে শুনেছে এই বনে নাকি বাঘ আর ভালুকও আছে।
দাদুর কাছে ছোটন অনেক শুনেছে বাঘের কথা। চোখের সামনে ভেসে ওঠে বাঘের ছবি। দাদু নাকি একবার বরাত জোরে বেঁচে গিয়েছিল বাঘের কবল থেকে। বাঘ দেখতে ছোটনের খুব মন চায়। আবার ভয়ও করে। একদিন ছোটন বনের ভেতর বসে আছে। হঠাৎ মনে হল বনের সব পশুপাখি যেন ছোটাছুটি ডাকাডাকি করছে। আর তারপরই হালুম করে বিকট এক গর্জন। ছোটনের মনে হল চারপাশ যেন কেঁপে উঠল। তীরবেগে সে ছুটতে লাগল।
ঘরের কাছে এসে সে চেঁচালো, ‘বাঁচাও! বাঁচাও! আমায় বাঘে তাড়া করেছে।’ বসতির সবাই লাঠি সড়কি নিয়ে বেরিয়ে এসে বলল, ‘কোথায়? কোথায় বাঘ?’ ছোটন বনের দিকে ইশারা করল। ছোটনের দাদু এগিয়ে এসে বলল, ‘ঠিক করে বলতো ছোটন বাঘ না অন্য কিছু? ছোটন তখন দাদুর কোলে মুখ লুকিয়ে বলল, ‘বিরাট গর্জন দাদু! হালুম!’ এমন সময় সেখানে বাঘের মুখোশধারী মধু বহুরূপী ‘‘মাফ করবেন বড়বাবু’’, বলে হাজির। এবার বোঝা গেল আসল কথা।