ছোটদের কথা
ছোটদের কথা
একদা এক সময় জয়পুর নামে এক গ্রামে মাধব নামে এক অত্যন্ত গরীব লোক বসবাস করত। খুব দারিদ্রের সঙ্গে সে জীবনযাপন করত। সে ছিল পরিশ্রমী, সৎ এবং বুদ্ধিমান। সে সবার বিপদে পাশে থাকত। গ্রামের প্রত্যেকে তাকে সম্মান করত, তাকে শ্রদ্ধা করত। মাধব এক ব্যবসায়ীর দোকানে কাজ করত। সেই দোকানের মালিকের নাম ছিল হরিহর। হরিহরের প্রচুর সম্পত্তি ছিল। তার দুটি বড়ো বড়ো দোকান ছিল। সেই গ্রামে হরিহরের মতো ধনী ব্যবসায়ী আর কেউ ছিল না। এখানে বলাবাহুল্য হরিহরের এত সম্পত্তি থাকা সত্ত্বেও সে ছিল অসৎ এবং সে সকলের সাথে খুব বাজে আচরণ করত। তাকে গ্রামের কেউই সম্মান করত না। সে অসহায় মানুষদের সাহায্য করার বদলে তাদের শোষণ করত। তার ছিল দুই ছেলে, বড়ো ছেলে ছিল খুব নিষ্ঠুর এবং সে সর্বদা কারোর না কারোর সাথে ঝামেলা করত। একদিন এক দাঙ্গায় তার মৃত্যু হয়। আবার হরিহরের ছোটো ছেলে এক ঝগড়ুটে মেয়েকে বিয়ে করে। সেই মেয়ে সবসময় তাঁদের সঙ্গে ঝগড়া করে। তাই সাংসারিক অশান্তি মুক্ত হওয়ার জন্য হরিহর বেশ কিছু সম্পত্তি ও টাকা পয়সা দিয়ে তার ছোটো ছেলে ও বউকে বাড়ি থেকে বিতাড়িত করে এবং তারাও সেই সম্পত্তি নিয়ে দূর-দেশে পাড়ি দেয়। এখন হরিহরের সম্পত্তিতে টান পড়ে। এই সময় একদিন এক বৃদ্ধলোক মাধবের কাছে আসে এবং বলে যে সে দু-দিন কিছু না খেয়ে আছে ও সে মাধবের কাছে সাহায্য চায়। তখন মাধব হরিহরের কাছে গিয়ে অগ্রিম বেতন প্রার্থনা করেন। তখন হরিহর তাকে অপমান করে বের করে দেয় ও তাকে তার কাজে থেকেও ছাড়িয়ে দেয়। মাধব মনের দুঃখে বাড়ি ফিরে আসে এবং তার বাড়িতে যতটুকু খাদ্য অবশিষ্ট ছিল তা সেই বৃদ্ধকে দান করে। বৃদ্ধ তাকে আশীর্বাদ করে বিদায় নেয়। সেই বৃদ্ধ ছিল একজন রাজ কর্মচারী। সে গ্রামে এসেছিল সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট পর্যবেক্ষণ করতে। সে রাজসভায় গিয়ে এই সমস্ত ঘটনা বিবৃত করে। রাজা চন্দ্রভানু তখন আদেশ দেন মাধবকে রাজসভায় নিয়ে আসতে এবং হরিহরের সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার কথা ঘোষণা করেন।
হরিহর সর্বহারা হয়ে পথে বসে। তার সব দম্ভ, অহংকার চূর্ণ হয়। সে ভিখারীতে পরিণত হয়। রাজা মাধবকে পঞ্চাশটি স্বর্ণ মুদ্রা দেন এবং বলেন যে এই তার পুরস্কার। মাধব সেই টাকা অর্ধেক দিয়ে নিজের একটি ভালো বাড়ি তৈরি করে এবং এক নতুন ব্যবসা শুরু করে। ও বাকি অর্ধেক টাকা সে গরীব গ্রামবাসীদের মধ্যে ভাগ করে দেয়।
গ্রামে তার সম্মান আরও বেড়ে যায়। মাধব তার বুদ্ধির জোরে তার ব্যবসা আরও বড়ো করে। সে অসহায়দের সাহায্য করে এবং সে যতটুকু রোজগার করে তা প্রায় সবই সাধারণ মানুষের মধ্যে দান করে দেয়। তখন একদিন মাধবের এক পুরনো বন্ধু ‘প্রলয়’ মাধবের বাড়ি আসে। সে মাধবের সব চিন্তাধারা, তার গরীবকে সমস্ত কিছু দান করা দেখে তাকে জিজ্ঞেস করে যে, সে সব টাকা মানুষদের বিলিয়ে দেয় কেন?
তখন মাধব বলে যে,
‘আজ যে রাজা কাল সে ভিখারী
চিরদিন কাহারও সমান নাহি যায়।’
অর্থাৎ আজ আমি রাজা কিন্তু কাল হয়তো এমন কিছু হবে যে আমি ভিখারীতে পরিণত হব। আমার কাছে ধন-সম্পত্তি কিছুই থাকবে না। কিন্তু যে সম্মান যে শ্রদ্ধা মানুষজন আমাকে করে তা কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। সেই সম্মান চিরকাল বর্তমান থাকবে। তাই আগে সম্মান তারপর সম্পত্তি। এই শুনে প্রলয় বলে ঠিকই বলেছ বন্ধু আমি এবার থেকে তোমার মতাদর্শ অনুযায়ী চলব। এই বলে প্রলয় বিদায় নেয়। মাধবও সুখে শান্তিতে জীবনযাপন করে।