ছোটদের কথা
ছোটদের কথা
স্নেহের ছোট্ট বন্ধুরা,
রাষ্ট্রসংঘ থেকে ২০১৮ সালেই প্লাস্টিক দূষণ থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করার আহ্বান জানান হয়েছিল। পৃথিবীর স্থল এবং সমুদ্রে বিশাল পরিমাণ মাইক্রো প্লাস্টিক কণা ছড়িয়ে পড়েছিল যার ভয়াবহতার জন্যই ২০১৮ সালে এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছিল। সেইসময় পৃথিবীর শিল্পোন্নত পাশ্চাত্য দেশগুলি অনেকেই ধীরে ধীরে প্লাস্টিক দ্রব্যের ব্যবহার কমিয়ে আনার জন্য নানারকম বিধিনিষেধ আরোপ করতে শুরু করে। প্লাস্টিকের পরিবর্তে আবার স্টীল বা কাঁচের পাত্র ব্যবহারে ফিরে যেতে শুরু করে।
ভারতের মতো বিশাল জনসংখ্যার অপেক্ষাকৃত নিম্ন আয়ের দেশগুলির পক্ষে সহজলভ্য এবং সুলভে প্রাপ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে আনা অত্যন্ত ব্যয় সাপেক্ষ ব্যাপার। যার ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলির পক্ষে ব্যয়বহুল স্টীল, পিতল বা কাঁচের পাত্র ব্যবহারে ফিরে যাওয়া সহজ হচ্ছে না।
২০১৮ সালেই সারা বিশ্বে প্লাস্টিক মাইক্রো প্লাস্টিক কণা হিসেবে বিশ্বের স্থল ও জলে ব্যাপক দূষণ এর কারণ হয়ে ওঠে। মাইক্রো প্লাস্টিক কণা বলতে অনেকে ন্যানো প্লাস্টিক বোঝায়। ন্যানো কথা মানে ১০০০০০০০০০ ভাগের ১ ভাগকে বোঝায়। বুঝতেই পারছ এই অদৃশ্য ন্যানো প্লাস্টিক কণা সমুদ্রের জলে মিশে থাকলে সামুদ্রিক মাছের পেটে ঢোকে আর সেই মাছ মানুষ যখন খায় তখন তার দেহে প্রবেশ করে সেই মাইক্রো প্লাস্টিক কণা যার ফলে তার শরীরে দেখা দেয় নানারকমের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া। প্লাস্টিক বর্জ্য পদার্থ হিসেবেও আজ পৃথিবীর জল স্থলকে ভয়ানকভাবে দূষিত করে ফেলেছে। সমুদ্রের এক বৃহদংশ আজ প্লাস্টিক বর্জ্যরে পাহাড়ে পরিণত হচ্ছে। বর্তমানে ভারত পৃথিবীর বৃহত্তম প্লাস্টিক বর্জ্যে উৎপাদনকারী দেশ। বিশ্বের ২০ শতাংশ বা এক পঞ্চমাংশ প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন করে ভারত। প্লাস্টিক বর্জ্য আমাদের অপব্যবহারে নালা নর্দমা বুজে যাচ্ছে। তোমরা অনেকেই জান প্লাস্টিক মাটির মধ্যে ফেললে সেটা দীর্ঘদিন মাটির নীচে থেকে মাটি দূষিত করে। বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় দেখা গেছে আমরা প্লাস্টিক বোতলে যে বিশুদ্ধ জল পান করি তার মধ্যেও রয়েছে মাইক্রো প্লাস্টিক কণা এবং সেই জলের মধ্যে দিয়ে সেই প্লাস্টিক কণা আমাদের দেহে ঢুকে বিপদ ঘটাচ্ছে।
এই নিদারুণ দূষণের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রসংঘ তাই এবছর আবার আহ্বান করেছে ‘‘প্লাস্টিক দূষণ পরাস্ত কর’’। এবার রাষ্ট্রসংঘ বলছে— ‘‘পৃথিবীর সর্বত্র প্রতিটি কোণায় প্লাস্টিক কণা প্রবেশ করেছে এমনকি আমাদের শরীরেও মাইক্রো কণা হিসেবে প্লাস্টিক ঢুকে পড়েছে এবং আমাদের সংক্রামিত করছে।’’
এর থেকে পরিত্রাণের উপায় সমবেতভাবে শিশু থেকে বৃদ্ধ পৃথিবীর সকল মানুষকে এই প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। একে পরাস্ত করতে হবে পৃথিবীকে বাঁচাতে হবে। নিজেদের বাঁচাতে হবে। শুধু গাছ লাগালেই হবে না, শৈশব থেকেই নিজের জীবনে ব্যবহার্য বস্তুতে যাতে প্লাস্টিক কণা না থাকে সেদিকে নজর রাখতে হবে। প্লাস্টিকের ব্যাগের পরিবর্তে চটের ব্যাগ, প্লাস্টিকের টুথব্রাশ-এর পরিবর্তে বিকল্প নিমডাল/পাটজাত দ্রব্যের ব্রাশ, প্লাস্টিকের ক্যারি ব্যাগ, প্লেট-কাপ এর পরিবর্তে কাগজের তৈরী জিনিস ব্যবহার বাড়াতে হবে। টিফিনবক্স, ওয়াটার বটল প্লাস্টিকের পরিবর্তে স্টিলের ব্যবহার করতে হবে। অর্থাৎ আবার ফিরে যেতে আমাদের পূর্ব পুরুষদের ব্যবহৃত ধাতব, মাটি, কাঁচের দ্রব্যাদিতে। প্রসাধন সামগ্রীতে মাইক্রো প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
ভাবতে কষ্ট হয় আমাদের ভারতের মতো এত জীববৈচিত্র্যের দেশে এবং বিজ্ঞানের এত উন্নতি সত্ত্বেও পৃথিবীর মধ্যে দূষণের ক্ষেত্রে ভারতের স্থান ৭৬ তার মানে দেশে পলিউশনের মাত্রা চরম পর্যায়ে।
পরিবেশ দূষণের এই অবস্থায় আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থ এভাবে বিঘ্নিত হতে দিতে পারেন না। আমরা মনে করি এই ভয়ানক দূষণ প্রতিরোধে তোমাদের যেমন কিছু করণীয় আছে তার থেকে অনেক বেশী দায় দায়িত্ব আছে আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থার। আমরা আশা করি ভবিষ্যত ভারতের জন্য বর্তমান রাষ্ট্রনেতাগণ আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসবেন এবং ভারতকে দূষণ মুক্ত করে সুন্দর ভারত গড়ে তুলতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করবেন।
ধীরেন্দ্রনাথ সুর