ছোটদের কথা
ছোটদের কথা
মাধবপুর নামক এক গ্রামে এক কৃষক ও তার পরিবার গ্রামের একটি অংশে বাস করত। পরিবারে সদস্য ছিল কৃষক, তার স্ত্রী ও তার একটি মাত্র ছেলে। কৃষক ও তার স্ত্রী খুব পরিশ্রমী ছিল। তারা আনন্দেই দিন কাটাত কিন্তু তাদের একটিই অভাব ছিল তা হল ধনসম্পদের। কৃষকের যা কিছু সম্পত্তি ছিল তা হল তার বাবার দু-বিঘা জমি। ওই জমিতেই সে চাষাবাদ করে এবং সেই চাষের ফসল থেকে যা আয় হত তা দিয়েই তাদের সংসার চলত। তারা খুব পরিশ্রম করত। সকলের আগে তারা উঠত এবং সকলের পরে ঘুমোতে যেত। তাদের এই দিন-রাত পরিশ্রম একদিন তাদের ধনী ব্যক্তিতে পরিণত করে। কৃষক দুই-তিনটি জমি, কিছু গোরু-মোষ কেনে এবং তাদের জন্য একটি বাড়ি বানায়। কিছু লোকও রাখে চাষের জন্য, গোরু-মোষের দুধ দোওয়ানোর জন্য এবং গোরু- মোষের ও ক্ষেতের দেখভালের জন্য। তাদের সমস্ত অভাব ঘুচে যায়। তার ছেলে এমন একটি ঝগড়ুটে বৌ বাড়িতে বিয়ে করে আনে যে সে বাবা-মা-এর কথা শুনত না এবং বললেই মুখে মুখে শুধু তর্ক করত। তাই কৃষক ছেলে-বৌকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিতে বাধ্য হয়। তার ছেলেকে কৃষক একটি বাড়ি, জমি ও দুই-তিনটি গোরু-মোষ দেয়। তারপর থেকে কৃষকের ধন সম্পত্তিতে টান ধরতে থাকে। একদিন গ্রামে দুর্ভিক্ষ হয় এবং কৃষকের ক্ষেতের অনেক ফসল নষ্ট হয়ে যায়। অত ফসল নষ্ট হওয়ার জন্য তার আর্থিক সম্পত্তিতে টান পড়ে। গোরু-মোষগুলি খাবারের অভাবে মারা যায়। কাজের জন্য রাখা চাকরদের মালিক বেতন দিতে না পারার জন্য তারা কাজ ছেড়ে দেয়। এই দেখে কৃষক ও তার স্ত্রী তাদের সর্বস্ব বিক্রি করে পথে বসে পড়ে। তাদের এইরকম অবস্থা দেখে তাদের এক প্রতিবেশী কৃষক ও তার স্ত্রীকে বলে, ‘‘তোমরা এইভাবে ভেঙে পড়ো না। তোমরা চাইলে আমার বাড়িতে থেকে আমার কাজে সাহায্য করতে পার। খাবার, শোওয়ার জায়গা সব আমিই দেব।’’ তারপর থেকে কৃষক ও তার স্ত্রী সেই প্রতিবেশীর বাড়িতে থাকে এবং দিন মজুরের মতো পরিশ্রম করে তাদের দিনপাত করে।
এই কৃষকের গল্প থেকে বোঝা যায় যে কৃষক যখন ধনী হল তখন সে রাজার মতো জীবনযাপন করত আবার যখন তার সম্পত্তিতে টান পড়ে সে তখন তার সর্বস্ব বিক্রি করে পথে বসে অর্থাৎ ভিখারীতে পরিণত হয়। তাই মানুষের চিরদিন সমান হয় না। অতএব, বলা যেতে পারে যে,
‘আজ যে রাজা, কাল সে ভিখারী,
চিরদিন কাহারও নাহি যায় সমান।’