ছোটদের কথা
ছোটদের কথা
‘খ’ বিভাগের তৃতীয় স্থানাধিকারী
মানব জীবনে আমাদের বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হলো গাছ। গাছ আমাদের জীবন ধারণের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গাছ ছাড়া আমরা বেঁচে থাকতে পারি না। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ জিনিস অক্সিজেন, যেটি ছাড়া আমরা বাঁচব না, সেটি আমরা গাছ থেকে পাই। ফুল, ফল, পাতা, এছাড়াও আসবাবপত্র প্রভৃতি জিনিস গাছ থেকে পাই। কাঠের সাহায্যে আমরা চেয়ার, টেবিল, বিভিন্ন কাঠের জিনিস তৈরি করতে পারি। গাছ থেকে আমরা জ্বালানি পাই। এছাড়াও বিভিন্ন পশু-পাখি, ছোটো ছোটো কীট-পতঙ্গ, যেমন— পিঁপড়ে, কাঠবেড়ালি, শুঁয়োপোকা ইত্যাদি প্রাণীর বাসস্থান হিসাবে গাছই হয়ে ওঠে। গরমের দিনে আমরা গাছের নীচে বসি, সেই গাছের ছায়া থেকে আমাদের আরামবোধ হয়। কোনো পথিক যদি গরমকালে সূর্যের তাপে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যায়, তখন সে সেই সূর্যের তাপ থেকে বাঁচার জন্য গাছের নীচে আশ্রয় নেয়। প্রচন্ড গরমের দিনে আমরা গাছ থেকে হাওয়া পাই, যেটির ফলে আমাদের খুবই আরামবোধ হয়। এছাড়াও গাছ আমাদের মাটিকে শক্ত করে ধরে রাখে। শক্ত ভাবে মাটিকে ধরে রাখার জন্য আমাদের মাটি আলগা হয়ে যায় না, তার ফলে ধস হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যায় না। আগেকার দিনে রং ব্যবহারের জন্য গাছের পাতার রস সবুজ রং হিসেবে ব্যবহার করা হতো। বিভিন্ন ঔষধি গাছ, যেমন— তুলসী থেকে আমাদের সর্দি-কাশির রোগ নিরাময় হয়, বাসকও আমাদের সর্দি-কাশি সারাতে ব্যবহার করা হয়, সর্পগন্ধা বিভিন্ন রোগ নিরাময় করে, সিঙ্কোনা গাছের ছাল থেকে ম্যালেরিয়ার ওষুধ তৈরি হয়। এছাড়াও মূলত গাছের পাতার রং হয় সবুজ। সবুজ জিনিস অর্থাৎ সবুজের দিকে তাকালে আমাদের চোখ ভালো থাকে। গাছ থেকে বিভিন্ন রকমের ফুল পাওয়া যায়। জবা, গাঁদা, লিলি প্রভৃতি ফুল পুজোর কাজে ব্যবহৃত হয়। আমরা আমাদের বাগানে যদি বিভিন্ন রকমের গাছ, ফুলের গাছ লাগাই তাহলে সেটি একটি মনোরম পরিবেশ তৈরি করে। বাগান ছাড়াও রাস্তাঘাট, পুকুরের ধার, বাড়ির আশেপাশে আমাদের গাছ লাগানো অতি প্রয়োজন। গাছ আমাদের ছায়া প্রদান করে। এই পৃথিবীতে একমাত্র গাছই আছে যা নিজের খাদ্য নিজেই তৈরি করতে পারে। গাছ মাটি থেকে জল, সূর্যের আলো, বাতাস প্রভৃতি নিয়ে সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার দ্বারা, তার পাতায় খাদ্য তৈরি করে। গাছ বিভিন্ন পশু-পাখির বাসস্থান হয়ে ওঠে। এছাড়াও আমরা অক্সিজেন নিচ্ছি এবং কার্বন ডাই অক্সাইড ছেড়ে দিচ্ছি। গাছ ঠিক তার উল্টোটা করে। গাছ পরিবেশ থেকে এই কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে এবং অক্সিজেন ত্যাগ করে। তার ফলে পরিবেশে কার্বন ডাই অক্সাইড-এর ভারসাম্য বজায় থাকে। কেউ যদি গাছ কাটে তাহলে আমাদের তাকে বারণ করতে হবে। তাকে গাছ কাটা থেকে বিরত করতে হবে এবং তাকে বুঝিয়ে দিতে হবে গাছের উপকারিতা। মানুষ সহ এই পৃথিবীর সমস্ত প্রাণী গাছের উপর পুরোপুরি ভাবে নির্ভরশীল। আমরা যদি এখন থেকে গাছ কাটা থেকে বিরত থাকি এবং সচেতন থাকি, তাহলে আগামী প্রজন্ম বেড়ে উঠবে প্রকৃতির সাথে, প্রকৃতির নিজস্ব নিয়মে। আগামী দিনে আমরাই হয়ে উঠব নাগরিক। আমরা যত সম্ভব গাছ লাগাব। গাছের প্রতি আমাদের ভালোবাসা বাড়াতে হবে। গাছ কাটলে শুধু আমাদের নয়, বিভিন্ন পশু-পাখির ক্ষতি হয়। বিভিন্ন পশু-পাখি তাদের বাসস্থান হারায়, তাদের বাসস্থান ধ্বংস হয়ে যায় এবং তাঁরা বাসস্থানহীন হয়ে পড়ে।