ছোটদের কথা
ছোটদের কথা
রুমঝুমের এখন গরমের ছুটি। তাই বলে ভোরবেলা ঘুম থেকে ওঠা সে ছাড়েনি। পুব আকাশে রবিমামা হামা দেওয়ার আগেই ঘুম থেকে উঠে চোখেমুখে জল দিয়ে বাগানে গিয়ে গাছেদের মাঝে দাঁড়ায়। সাতসকালে গাছেদের সাথে সেও রবি আলোকে চান করে। তারপর বাগানের গাছেরা কে কেমন আছে তার তদারকি করে ঘরে আসে।
শুরু হয় হারমোনিয়াম নিয়ে গান। তারপর জলযোগের পর দাদুর কাছে পড়তে বসা। পড়া শেষে ঠাকুমার কাছে শোনে রামায়ণ ও মহাভারতের কথা। একটু বেলায় চান করতে যাবার আগে আবার বাগানে গিয়ে গাছে জল দেওয়া। কোথাও পোকা লেগেছে কিনা দেখা। তারপর গাছেদের সাথে ভাললাগার ভালবাসার কথা বলা। মানে সকাল থেকে বিকেল অবধি সকল কাজ চমৎকার ভাবে সাজানো।
রুমঝুমের বাবা এবং মা দুজনেই চাকরি করেন। অনেকদূরে অফিস বলে তাঁরা খুব সকাল সকাল গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। একমাত্র ছুটির দিন সবাই মিলে হইহই করে। বাকি দিনগুলোতে দাদু ও ঠাকুমাই রুমঝুমের দেখাশোনা করে। একটা ছুটির দিনে রুমঝুমের মামাতো ভাই বাবলু ও কাবলু পিসির বাড়ি বেড়াতে এল। সারাদিন হইচই-এর পর বিকালে বাড়ি ফেরার আগে তারা রুমঝুমের বাগান দেখতে গেল। বাগানের মাঝখানে ঘাসের বিছানায় এসে বসলো সবাই। খানিকটা সময় কাটিয়ে ওঠার পালা। বাগান সকলের খুব ভালো লেগেছে। আরও ভালো লেগেছে বাগান ভরা ফুল আর গাছে গাছে পাখি। কতো রঙবেরঙের পাখি আর তাদের কতরকমের কলতান। ঘাসের বিছানা ছেড়ে খানিকটা এগিয়েছে ওরা। সামনে বাবা-মা, তার পেছনে বাবলু কাবলু, আর সবার পেছনে রুমঝুম দাদুর সাথে। হঠাৎ রুমঝুমের চিৎকার— ‘বাবলুদা এটা কী করলে?’ সবাই ভয়ে থমকে গেছে। বাবলু লাফিয়ে একপা পিছিয়ে গিয়ে বলল, ‘আমি আবার কী করলাম?’ রুমঝুম ছুটে এসে একটা ঝুমকো লতা হাতে নিয়ে বলল, ‘এই লতাটাকে মাড়িয়ে প্রায় শেষ করে দিয়েছ। অবশ্য আমি জানি তুমি ঠিক খেয়াল করোনি।’ কথার শেষে লতাটাকে বাগানের বেড়ার গায়ে লাগিয়ে দিয়ে ফের বলল, ‘বাবলুদা গাছেরও তো প্রাণ আছে। আজ যদি এটা ঝুমকো লতা না হয়ে একটা কচি ছেলের হাত হতো তাহলে!’