ছোটদের কথা
ছোটদের কথা
সৌর জগতের চতুর্থ গ্রহ হল লালগ্রহ মঙ্গল। পৃথিবীর আকাশে সদা ভাস্বর এই মঙ্গল গ্রহ সম্বন্ধে জানার আকর্ষণ মানুষের দীর্ঘদিনের। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের নাসার পাঠানো কিউরিসিটি ও ইসরোর পাঠানো মঙ্গলযান মঙ্গল গ্রহ সম্বন্ধে নানান তথ্য সংগ্রহ করছে। পৃথিবীর প্রায় যমজ এই গ্রহটির বুকে স্থায়ী আবাসন স্থাপনের জন্য মানুষ দীর্ঘদিন ধরে ভাবনা চিন্তা শুরু করেছে। পৃথিবীতে মানুষের আয়ু যদি শেষ হয়ে যায় ও তা যদি মানুষের বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে যায় তখন হোমোসেপিয়েন্স লালগ্রহে বিচরণ করবে। এই তাদের ইচছা। ষাটের দশকে সুইজারল্যান্ডের লেখক এরিক ভন ডেনিকেন তার প্রথম বই ‘দি চ্যারিয়ট অফ গড’ প্রকাশ করেন, সালটা ১৯৬৮। মানব সভ্যতার ওপর বহিঃজগতের প্রভাব নিয়ে তিনি বই লিখে বিখ্যাত হয়েছেন। এই গ্রন্থও বিজ্ঞানীদের মঙ্গল গ্রহে বসবাসের জন্য উৎসাহিত করে।
বর্তমানে ২০৩৩ সালে নাসা এই গ্রহে মানুষ পাঠাবে বলে ঘোষণা করে এবং এখন তার পুরোদস্তুর প্রস্তুতি চলছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একজন হলেন এলিসা কারসন। তাঁর বয়স মাত্র কুড়ি বছর। সব কিছু ঠিকঠাক চললে এই এলিসাই হবেন প্রথম মহিলা মানব সন্তান যিনি মঙ্গল পৃষ্ঠে অবতরণ করবেন এবং সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করবেন। শৈশব অবস্থা থেকেই এলিসা মহাকাশচারী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। বয়স বাড়ার সাথে সাথে তিনি এই স্বপ্নকে আরও আঁকড়ে ধরেছেন। তিনি মহাকাশে ভ্রমণ, গ্রহ নক্ষত্র ইত্যাদি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের বই পড়েন, টিভি দেখেন, বিভিন্ন জায়গায় সেমিনার এটেন্ড করেন। ২০১৩ সালে তাঁকে নাসার টিভি চ্যানেল এমইআর-১০ চ্যানেলে আমন্ত্রণ জানায়। সেখানে মহাকাশ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি সক্রিয়ভাবে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। এই আলোচনার ভিত্তিতে ‘মার্স ওয়ান’ সাতজন অ্যাম্বাসেডর নির্বাচন করে। তার মধ্যে তিনি একজন। এই ‘মার্স ওয়ান’ হল ২০৩৩ সালে মঙ্গল গ্রহে মানুষ পাঠানোর এক মিশন। ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে এই এলিসাকে এডভান্স পসাম একাডেমির সর্ব কনিষ্ঠ গ্রাজুয়েট হিসেবে মহাকাশে যাবার আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দান করেন। তারপর তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নাসার স্পেস ক্যাম্পগুলিতে সফলভাবে প্রশিক্ষণ শেষ করেন এবং সেই প্রশিক্ষণ শেষে পৃথিবীর মধ্যে প্রথম হয়ে তিনি সকলকে অবাক করে দেন।
নাসার সাথে যুক্ত আছে একটি বেসরকারি সংস্থা ‘স্পেস এক্স মার্স’। এই সংস্থার মুখ্য উদ্দেশ্য হল— মঙ্গল গ্রহকে মনুষ্য বসবাসের উপযোগী করে তোলা। এই গ্রহে যাওয়ার জন্য এই সংস্থা বানিয়েছে একটি বিশেষ মহাকাশযান নাম ‘স্পেস এক্স স্টারশিপ’। এই মহাকাশযানেতে যেতে পারবেন ১০০ জন যাত্রী। তাদের পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে ২০২৪ সালের মধ্যে তারা প্রথম মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে এবং যাত্রী সমেত তারা প্রথম মঙ্গলে যাবে ২০২৬ সালে। তারা মঙ্গলের জমিকে ধীরে ধীরে মনুষ্য বসবাসের উপযোগী করে তুলবে। প্রয়োজনে ওই সংস্থা মঙ্গলে জমি বিক্রি করবে, জীবনধারণের উপযোগী সকল পদার্থকে ধীরে ধীরে তারা মঙ্গলেই তৈরি করে নেবে।
বর্তমানে ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট’ পক্রিকায় আমেরিকার মঙ্গল অভিযান নিয়ে বিস্তারিত বিবরণ আছে। সেখানে একটি গবেষণাপত্রের উল্লেখ রয়েছে। মঙ্গলে পাকাপাকিভাবে বাস করতে গেলে কত জন নভোচারীকে পাঠাতে হবে তার বিস্তারিত বিবরণ সেখানে দেওয়া হয়েছ। মার্কিন বিজ্ঞানীদের দাবি এই লালগ্রহে থাকতে গেলে অন্ততপক্ষে ১০০ থেকে ৫০০ জন মানুষের প্রয়োজন। তবে প্রাথমিকভাবে সেখানে ২২ জন মহাকাশচারীকে পাঠানো যেতে পারে।
নাসার দেওয়া তথ্য অনুসারে লালগ্রহে স্থায়ীভাবে বসবাস করা খুবই কঠিন। সেক্ষেত্রে জটিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর সাহায্য নিতে হবে। মঙ্গলের প্রাকৃতিক সম্পদও সীমিত। তেজস্ক্রিয় রশ্মির প্রভাবও আছে প্রচুর। এখানে প্রতি মুহূর্তের জন্য যে বিদ্যুৎ শক্তির প্রয়োজন সেটি তৈরি করবে সৌর প্যানেলগুলি।
যদিও এই পরিকল্পনার মধ্যে অনেক ‘যদি’, ‘কিন্তু’ ইত্যাদি শব্দগুলি আছে কিন্তু মানুষ ছাড়বার পাত্র নয়। পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে তারা নিশ্চয়ই একদিন সফল ভাবে মঙ্গলে বসবাস শুরু করবে এই আশা করা যেতেই পারে।