ছোটদের কথা
ছোটদের কথা
স্নেহের ছোট্ট বন্ধুরা,
বাংলার ছয় ঋতুর রাজা বসন্ত চলছে। লাল শিমুল পলাশের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তোমরা নিশ্চয়ই উপভোগ করছ। তোমরা ইতিমধ্যেই জেনেছো এমাসে মানুষের মস্তিষ্কপ্রসূত চিন্তার সর্বশেষ উৎকর্ষ এবং মহাকাশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চরমতম উৎকর্ষ এবং সাফল্য— ন’মাস ধরে মহাকাশ স্পেস স্টেশনে আটকে পড়া নভোশ্চর ভারতীয় বংশোদ্ভূত সুনীতা উইলিয়ামস এবং বুচ উইলমোরকে নিরাপদে ফিরিয়ে আনলেন পৃথিবী থেকে নাসার পাঠানো দুই নভেশ্চোর নিক হেগ ও আলেক্সান্দার গরবুনভ। সমস্ত প্রক্রিয়া পরিচালনা করেন আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসায় বৈজ্ঞানিকরা তাদের পুঙ্খানুপুঙ্খ নির্ভুল পরিকল্পনা ও নির্ভুল গাণিতিক গণনার মাধ্যমে। এই পরিকল্পনা ও গাণিতিক গণনা লক্ষ ভাগের ১ ভাগ ভুল হলেই ঘটে যেত ভয়ানক পরিণতি। রবীন্দ্রনাথ শতবর্ষ আগে বলে গিয়েছিলেন— মানুষ চূর্ণিল যবে নিজ মর্ত্যসীমা/তখন দেখা দেবে না কি দেবতার অপার মহিমা। প্রকৃতি জগতে লক্ষ লক্ষ বছর বিবর্তনের মধ্যে সর্বশেষে মানুষের আবির্ভাব হলেও মানুষ তাঁর অপার মহিমায় প্রতিনিয়ত এগিয়ে চলেছে। আজ বিজ্ঞান প্রযুক্তি মঙ্গলে বসতি স্থাপনের স্বপ্ন দেখছে। আজ যে স্বপ্ন, কল্পনা, ভবিষ্যতে মানুষ তাকে কল্পনা থেকে বাস্তবে রূপ দিতে সক্ষম হবে। মহাকাশে ন’মাস কাটানো এবং তাঁদের সশরীরে ফিরিয়ে আনা আজ থেকে একশ বছর আগে তাও তো কল্পনাই ছিল। তাই এ বিজ্ঞানের সাফল্যই তোমাদের লক্ষ্য হবে, অন্ধবিশ্বাস, অপবিজ্ঞান কুসংস্কারের কালো ছায়া যেন তোমাদের আচ্ছন্ন না করে। আগামীদিন তো তোমাদের। কে বলবে আগামী পঞ্চাশ বছরে তোমাদের কেউ না কেউ ঘুরে বেড়াবে মহাকাশের মহাশূন্যে। তোমরা জেনেছ যে গতবছর ৬ জুন আটদিনের জন্য আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে (ইন্টারন্যাশনাল স্পেস সেন্টার) গিয়েছিলেন সুনীতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোর। যাত্রার মাঝেই তারা যে মহাকাশযানে গিয়েছিলেন তার কিছু ত্রুটি ধরা পড়ে। তার ফলে নাসার বিজ্ঞানীরা ঐ যানে তাঁদের ফিরিয়ে আনার ঝুঁকি নেন নি। লক্ষ লক্ষ কিলোমিটার দূরে মহাকাশে মহাশূন্যে আটদিনের জায়গায় ৯ মাস কাটানো কী ভয়ানক মানসিক চাপ, উদ্বেগ কাটিয়ে ঐ অবস্থায় নিজেদের মানসিক স্থিতাবস্থা বজায় রাখা এবং ভয়ভীতি উপেক্ষা করে যে সাহস ও ধৈর্য্যরে পরীক্ষা দিয়েছেন এই দুই নভোশ্চর তা কণামাত্র যদি তোমরা নিজেদের দৈনন্দিন জীবনে পালন করার চেষ্টা করো তাহলেই সুনীতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোর এর প্রতি জানান হবে সত্যিকারের শ্রদ্ধা ও সম্মান।
সুনীতা উইলিয়ামস এবং বুচ উইলমোর-এর ফিরে আসার উদ্বেগজনক শেষ ১৭ ঘণ্টার নির্ঘণ্ট
● ১৭ মার্চ, ২০২৫, রাত ১০টা ৪৫ মিনিট : স্পেস এক্সের ড্রাগন ক্যাপসুলে ঢুকলেন চার নভশ্চর।
● ১৮ মার্চ, রাত ১টা ৫ মিনিট : পৃথিবীমুখী ১৭ ঘণ্টার যাত্রা শুরু।
● এর পরে ১৬ ঘণ্টা ধরে নীচের কক্ষপথে নামা, গতি নিয়ন্ত্রণ, যান থেকে স্তম্ভাকার অংশ পৃথক, বায়ুমন্ডলে প্রবেশর প্রস্তুতি।
● ১৮ মার্চ, বিকেল ৫টা ১৮ মিনিট : মহাকাশযানের ‘ডিঅরবিট বার্ণ’। পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে প্রবেশ। যানের গতি কমিয়ে লক্ষ্যের দিকে এগানো।
● আতঙ্কের ৬ মিনিট : বায়ুমন্ডলে প্রবেশের সময় যানের গতিবেগ ঘণ্টায় ২৮,০০০ কিমি। গতি কমতে থাকে, কিন্তু বায়ুস্তরের সঙ্গে ঘর্ষণে যানের তাপরোধী বর্ম ছোঁয় ১৬০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সাময়িকভাবে যোগাযোগ বিচিছন্ন।
● ১৮ মার্চ, সন্ধ্যা ৫টা ৫৭ মিনিট : ত্রু ড্রাগন ফ্লরিডা উপকূলের কাছে সমুদ্রে নামল। ভারতে তখন বুধবার ১৯ মার্চ ভোররাত ৩টে ২৭ মিনিট।
● নাসা ও স্পেস এক্সের উদ্ধারকারী জাহাজে তোলা হলে ক্যাপসুল থেকে বেরিয়ে এলেন চার মহাকাশচারী।
● প্রাথমিক চিকিৎসার পরে গন্তব্য হিউস্টন জনসন স্পেস সেন্টার। পৃথিবীর আবহাওয়ায় শারীরিক ও মানসিক স্থিতি ফেরাতে ৪৫ দিন পুনর্বাসন।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা, ২০ মার্চ ২০২৫