ছোটদের কথা
ছোটদের কথা
কুস্তলগড় টাইগার রিজার্ভের বনরাজ সিংহ কেশরী সকাল বেলায় মর্ণিং ওয়াক সেরে এসে দৈনিক বনবাণীটা তুলে নিলেন। প্রথমেই চোখ গেল প্রথম পাতায়। ‘আগামী ২৯শে জুলাই— বিশ্ব ব্যাঘ্র দিবস’। মনে মনে ভাবলেন— ভালো করে পড়ে দেখতে হয়। চেয়ারে বসেই হাঁক পাড়লেন, ‘কই গো গিন্নী, চা হল?’ হাতে চায়ের কাপ না নিয়ে খবরের কাগজটা যেন জুত করে পড়া যায় না।
মনে পড়ে গেল আজকে কান্তার হেয়ার স্টাইল সেলুনে তাকে যেতে হবে। কালকেই শৃগাল নাপিতকে বলে এসেছেন। এবার তার কেশরের ট্রিমিং না করালেই আর চলছে না। কিন্তু তার আগে কুস্তল গড়ের কেষ্ট বিষ্টুদের একটু বলে আসতে হবে। ২৯ তারিখের ব্যাপারে আজ বিকেলেই একটা মিটিং করা চাই। চায়ের কাপটা নামিয়ে রেখেই তিনি বেরিয়ে পড়লেন।
বিকেলে সূর্য অস্ত যাবার আগেই তাদের মিটিং আরম্ভ হয়ে গেল। ডোরাচাঁদ বাঘ বলে উঠল, ‘মানুষের সব কান্ডই অদ্ভুত। ওরা অযথা মেরে মেরে আমাদের শেষ করে দিচ্ছে আবার ওরাই বিশ্ব ব্যাঘ্র দিবস পালন করছে। ভূতের মুখে রাম নাম।’
জাম্বু ভালুক বললে, ‘ব্যাঘ্র দিবস উপলক্ষ্যে কুস্তল গড়ে একটা অনুষ্ঠান করলে কেমন হয়?’
কেকা ডাক ছেড়ে ময়ূর বলে উঠল, ‘তা আমরা করবটা কি? নাচ, গান, নাটক না কবিতার আসর?’
হনুমান এবার উঠে দাঁড়াল, ‘সবাই অনুমতি দিলে আমি একটা কথা বলি?’
সিংহ গম্ভীর গলায় বললো, ‘বলো না বাপু। আমরা তো সবার কথা শোনার জন্যই এখানে জড়ো হয়েছি।’
‘বাঘের ভূমিকায় অভিনয় করার একটা কম্পিটিশান করলে কেমন হয়? যারা এতে অংশগ্রহণ করবে তারা বাঘের মেক আপ নিয়ে তার মত হালুম করে স্টেজে এসে হাজির হবে। তাদের মেক আপ আর অভিনয়ের ভিত্তিতেই তাদের নম্বর দেয়া হবে। সেই হিসেবেই সবাই ফার্স্ট সেকেন্ড থার্ড হবে।’
এই শুনে ষষ্ঠীদাস বেড়াল তো বেজায় খুশি, ‘মামা কী বল? আমার গায়ে হলদে রং লাগিয়ে তার ওপর কালো কালো ডোরা কেটে নিলেই তো আমি বিলকুল তোমার মত দেখতে হয়ে যাব।’
ডোরাচাঁদ মুচকি হেসে বললে, ‘বটেই তো। বেড়াল যদি মামার মত হয় রে ডোরা কাটা/ম্যাঁও না করে ডাকলে হালুম উঠবে কেঁপে পাড়া।’
হীরামন টিয়া ডানা ঝাপটে ট্যাঁ ট্যাঁ করে উঠল, ‘এ তো ভারী মজা হবে। আমার সবুজ পালকে হলদে রং করে তার ওপর কালো কালো টিপের ফোঁটা দিলেই তো আই উইল লুক লাইক এ চিতা। নয় কি?’
পায়রা দুটো বকম বকম করে উঠল, ‘ক্যা বাত হ্যায়! উড়ন্ত বাঘ দেখে সব্বাই তাজ্জব বনে যাবে।’
ছোট্ট হাতি গজা শুঁড় নেড়ে বলল, ‘রাজা বাহাদুর, আমি কী করব? এই শুঁড়টাকে ম্যানেজ করব কী করে? তাহলে কি আমি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারব না?’
‘কেন পারবি নে? একটু ভাবলে পাবেই বাপু পথ/ চলবে ছুটে তোমার সাধের রথ।’
‘সারা বনে সেই বার্তা রটি গেল ক্রমে।’ চারিদিকে পড়ে গেল সাজ সাজ রব। জাম্বুর ছেলে ছোট্ট ভালুয়া কিন্তু ভারী বিপদে পড়ে গেল। যাতে ডোরার মত দেখতে হয় তাই সে পায়ের কালো কালো লাইনের মত জায়গা ছেড়ে বাকি জায়গায় সাত সকালে হলদে রং লাাগিয়ে দিল, বিকেল নাগাদ তো শুকিয়ে যেতেই অমনি তার গায়ের লোমগুলো শজারুর কাঁটার মত খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। বেচারী দৌড়ল জাম্বুর কাছে, ‘ও বাবা, এ কী দশা হল আমার? আমার সমস্ত লোমগুলো চুলকোচ্ছে যে।’
‘আহ এতে ঘাবড়াবার কী হয়েছে? রাতটুকুর তো ব্যাপার। এখন মা’কে বলে গায়ে বেশ করে নারকেল তেল লাগিয়ে দে। কমপিটিশান হয়ে গেলে বেশ করে শ্যাম্পু মেখে স্নান করে নিবি। নো প্রবলেম।’
বাঘের মেক আপ নিতে গিয়ে সাদা বককে বিশেষ করে বেগ পেতে হল না, কিন্তু কালো কাক বেচারা সারা গায়ে রং লাগিয়ে আর ভালো করে উড়তে পারে না! কোন রকমে একটু লাফিয়ে লাফিয়ে গাছের এ ডাল থেকে ও ডালে চলল খাবারের সন্ধানে।
জম্বুক শেয়াল নিজের মেক আপ করে ছুটল ডোরা চাঁদের কাছে, ‘মামা, আমায় দেখতে কেমন লাগছে? ঠিক করে বলবে কিন্তু।’
ডোরা চাঁদ হা হা করে হেসে উঠল, ‘মানুষ হলে বলতাম নরানাং মাতুলঃ ক্রম।’
জঙ্গলের অনুষ্ঠানের খবরটা বনবাণীতে তো বেরিয়েই ছিল। ফলে বেশ জানাজানি হয়ে গেল। টাইগার রিজার্ভের পশু পাখিরা যখন এই সব নিয়ে ব্যস্ত, ওদিকে এক চোরশিকারির দল বলাবলি আরম্ভ করে দিল, ‘ওস্তাদ, এই তো সুযোগ। ওরা যখন এই সব নাচানাচি আর আদিখ্যেতা করবে আমরা দুটো একটা জন্তুকে খপ করে তুলে নেব। আর তারপর—’
চোরাশিকারিদের সর্দার বলল, ‘হুম্, একটা বাঘের বাচ্চা ধরতে পারলে মার্কেটে ভালো দাম পাওয়া যাবে।’
‘তব কেয়া হ্যায়? হো যায় তৈয়ারি।’
ওরাও নিজেদের জিপ, খাঁচা আর বন্দুক টন্দুক নিয়ে প্রস্তুত হয়ে গেল।
২৯শে জুলাইয়ের বিকেল নাগাদ ওদের অনুষ্ঠান শুরু হল। মহারাজ সিংহ কেশরী ঘোষণা করলেন, ‘বাঘ, হাতি আর হরিণ— এরা তিনজনে থাকবেন বিচারকমণ্ডলীতে। প্রত্যেকের হাতে থাকবে দশ দশ নম্বর। মেকআপের জন্য বরাদ্দ পাঁচ নম্বর আর অভিনয়ের জন্য পাঁচ নম্বর। অর্থাৎ টোটাল তিরিশে কে মোট কত পেল তা দিয়েই ঠিক হবে ফার্স্ট সেকেন্ড ইত্যাদি কে কী হল। অবিশ্যি দু-একটা সান্ত্বনা পুরস্কারও থাকবে।’
গজা নিজের কান দুটো কুলোর মত নাড়তে নাড়তে শুধাল, ‘রাজা মশাই, এ্যাক্টিঙে আমাদের কী করতে হবে?’
‘যত দূর সম্ভব বাঘের মত ডাক ছেড়ে লাফ দেবে, ঝাঁপিয়ে পড়বে, এই আর কী! এমন কিছু নয়।’
হীরামন ট্যাঁ ট্যাঁ করে উঠল, ‘আমরা পাখিরা তাহলে কী করব? আমি কি ট্যাঁ ট্যাঁ ছাড়া অন্য ডাক ডাকতে পারি নাকি?’
‘আহা, ঘাবড়াচ্ছিস কেন? যতটুকু সম্ভব নকল করা বই আর তো কিছু নয়। লোকেদের বাড়ির খাঁচায় বসে তো তোর আত্মীয়েরা যেমন ‘হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ’ করে, তেমনি আবার ‘দূর হ’, ‘দূর হ’ ও করে।’
যাক, আকাশের রং রাঙা হওয়ার আগেই অনুষ্ঠান আরম্ভ হয়ে গেল। সবচাইতে প্রথমে হল কোকিল, ময়না, শেয়াল আর হরিণের মিলিত কণ্ঠস্বরে কোরাস, ‘বনলক্ষ্মী থেকো মাগো, আমাদের এ বনে/বিরাজো অচলা হয়ে হৃদি সিংহাসনে/মোরা যত পশু পক্ষী তোমারই সন্তান/দুষ্টু লোকের হাত থেকে মা রক্ষা কোরো প্রাণ।/সবুজ বরণ গাছ গাছালি তারাই তোমার গয়না/তাদের ক্ষতি মোদের প্রাণে কিছুতেই মা সয়না।’ ইত্যাদি।
অনুষ্ঠান শুরু হবার আগে একটু বক্তৃতা না হলে কি চলে? সিংহ মশাইয়ের আদেশ হতেই ডোরাকাটা উঠে দাঁড়াল, ‘ভাইসব’, তারপর একটু থেমে আর কেশে সিংহের দিকে তাকিয়ে আবার বলল, ‘১৯৭২ পর্যন্ত তো ভারতের জাতীয় পশু ছিল সিংহ। বর্তমানে ভারত ছাড়া এই পাঁচটা দেশের জাতীয় পশু হল বাঘ— বাংলাদেশ, মায়ানমার, মালেশিয়া, ভিয়েতনাম এবং দক্ষিণ কোরিয়া। নাগপুরকে বলা হয় টাইগার ক্যাপিটাল। বাঘের সংখ্যা একটু বাড়লেও সত্যি সত্যি কি আমরা নিরাপদে আছি? মানুষ গাছ কাটে, সর্বত্র প্লাস্টিক ফেলে ছড়িয়ে রাখে আবার ন্যাকামি করে বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করে। তেমনিই বাঘ সংরক্ষণের ব্যাপারটাও যেন ভূতের মুখে রাম নাম।’ এই সব।
অনুষ্ঠান পরিচালনার ভার পড়েছিল ময়ূরের ওপর। সে তারস্বরে এক একজন প্রতিযোগীর নাম করে ডাকতে লাগল, ‘সর্বপ্রথমে আমি সাদরে আমন্ত্রণ জানাই আমাদের সবার আদরের ভালুয়াকে।’
এক লাফে ভালুয়া মঞ্চে প্রবেশ করতে গিয়েই একটু গড়িয়ে গেল। দর্শকেরা ভাবল এটাও অভিনয়েরই অঙ্গ। সবাই হাততালি দিয়ে হো হো করে হেসে উঠল। এরপর গর্জন করতে হবে। দুই পায়ে খাড়া হয়ে ভালুয়া ডাক দিয়ে উঠল। কিন্তু তা তো আর হালুম নয়। যাই হোক সে বেশ বাহবা পেয়ে গেল।
তারপর হীরামনের এন্ট্রি। বাঘের ঝাঁপ দেয়ার মত করে সে উড়ে এসে স্টেজে প্রবেশ করল। দর্শকেরা বেজায় খুশি, ‘উড়ন্ত বাঘ আকাশ থেকে ঐ দিয়েছে লাফ/বনের যত দুশমনদের এবার করো সাফ!’
ট্যাঁ ট্যাঁ দিয়েই সে তার গর্জনটাও পুরো করল।
গজা বুদ্ধি খাটিয়ে একটা নতুন জিনিস করল। নিজের ল্যাজের সামনে একটা বাঘের মুখোশ লাগিয়ে সে পিছু হেঁটে এন্ট্রি নিল। বরং নিজের শুঁড়টাকে সে বাঘের ল্যাজের মত আছড়াতে লাগল। তার ‘ল্যাজ’ নাড়া দেখেই দর্শকেরা হাততালি দিতে লাগল। তারপর হালুম করতে গিয়ে সে এমন বৃংহণ ডাক ছাড়লে যে সবার পিলে চমকে গেল। পাখির বাচ্চাগুলো তো মা মা করে কেঁদেই ফেলল। যাক, সেও কম প্রশংসা পেল না।
তারপর এল চিল। ডোরাকাটা পাখা ঝাপটে বাঘের মত ঝাঁপ দিয়ে সেও এন্ট্রি নিল। যেন সামনে একটা শিকার পেলেই সে সেটা তুলে নেবে।
জেব্রা বাহাদুর বেশ কায়দা করে মেকআপ নিয়েছিল। নিজের গায়ের কালো ডোরাগুলো বাদ দিয়ে সে সাদা চামড়ায় হলুদ রং লাগিয়ে নিয়েছিল। স্টেজে এসে এক পাক খেয়ে যেই হালুম করতে যাবে অমনি অভ্যাসবশত সে তার পেছনের পা দুটো তুলে লাথি ছুঁড়ল। তা দেখে দর্শকেরা তো একেবারে হেসে গড়িয়ে গেল, ‘ওরে দেখ দেখ, বাঘ বাবাজীও চাঁট মারছে।’
ষষ্ঠীদাসের সবই ভালো হয়েছিল, শুধু হালুম করতে গিয়ে ম্যাঁও হয়ে গিয়েছিল। এছাড়াও আরও কয়েকজন বাঘ সেজে উপস্থিত হল। হাততালির শব্দে বনের গাছপালার ডালপালা গুলো পর্যন্ত কেঁপে উঠল।
কুস্তলগড়ে আঁধার ঘনাবার পূর্বেই অনুষ্ঠান শেষ হল। এবার পুরস্কার বিতরণ। সিংহ কেশরী গজার হাতে তুলে দিলেন ফার্স্ট প্রাইজ— এক বস্তা অমৃতসরের ভালো এখো গুড়। সেকেন্ড প্রাইজে ষষ্ঠীদাস পেল এক হাঁড়ি বেনারসের রাবড়ি। তৃতীয় স্থানে ছিল হীরামন। সে পেল এক ঝুড়ি বড় বড় সাদা কাবুলি চানা। এছাড়া তিনটে সান্ত্বনা পুরস্কার।
এবার যে যার বাসায় ফিলে চলল। চোরা শিকারির দল তো এ সুযোগের অপেক্ষাতেই বসে ছিল। বনের গাছপালার আড়ালে আড়ালে তারা এদের ফলো করতে লাগল। ষষ্ঠীকে দেখে সর্দার বলল, ‘ঐ বাঘের বাচ্চাটাকে ধর। ভালো দাম পাওয়া যাবে। ওটাকে একটা চটের বোরা ফেলে চেপে ধর।’
‘যো হুকুম, সর্দার।’
যেই না ষষ্ঠীর গায়ে তারা চটের বোরাটা ছুঁড়ে দিল অমনি বোরা চাপা অবস্থায় সে ‘ম্যাঁও, বাঁচাও!’ বলে চিৎকার করে উঠল।
ষষ্ঠীর আর্তনাদ শুনতে পেয়েই অন্য পশু পক্ষীরা চমকে উঠল, ‘ওরে ওটা ষষ্ঠী বেড়ালের ডাক না? ও নিশ্চয়ই কোনো বিপদে পড়েছে!’
বাঘের মেকআপে হনুমান একটা গাছ থেকে লাফ দিয়ে পড়ল জিপের ভেতরে। শিকারীরা ভয়ে আতঙ্কে অস্থির, ‘ওরে বাবারে! এ বনের বাঘ গাছ থেকে লাফ দেয় নাকি?’ হনু তো ততক্ষণে তাদের আঁচড়ে কামড়ে পাগল করে তুলেছে।
ওদিকে চিল আর হীরামনও উড়ে এসে তাদের মুখে চোখে ঠোকরাতে লাগল।
‘হে মা কালী বাঁচাও মাগো। এখানকার বাঘ আবার উড়তেও পারে? এ কোন আজব জঙ্গল মা!’
ততক্ষণে গজাও দৌড়ে এসে নিজের শুঁড় দিয়ে ঠেলে জিপটাকে কাত করে দিল। বদমাইশদের অবস্থা তখন ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি! একটা গুন্ডা বলে ফেলল, ‘বস, এখানকার হাতির শুঁড়ে কত তাকত দেখেছ?’
‘চুপ কর হতভাগা। শুঁড়ের তাকত দেখাচেছ। আমি মরছি নিজের জ্বালায়।’
জিপটা ডিগবাজি খেতেই তারা সবাই মাটিতে পড়ে গড়াগড়ি খাচিছল। ভাবল জিপ ছেড়ে দৌড়েই হবে পগার পার। কিন্তু ততক্ষণে কুস্তলগড়ের সমস্ত পশু পাখিরা তাদের ঘিরে ফেলেছে। গুন্ডারা সবাই হাত জোড় করে কাঁদতে থাকে, ‘মাইরি বলছি, এ পাপ আর করব না। এবারের মত মাফ করে দে লক্ষ্মীটি ভাই সব।’
ইতিমধ্যে ডোরাকাটা আর সিংহ কেশরীও ছুটে এসেছে। ডোরাকাটা বললে, ‘যত ইচ্ছে করবি তোরা পাপ/ধরা পড়লেই কেঁদে বলবি— বাপ?’
বনরাজ গর্জে উঠলেন, ‘খামোশ, সবকটা শয়তানকে ধরে নিয়ে চল। ফরেস্ট অফিসারদেরকে ডেকে অ্যারেস্ট করিয়ে দাও। জেলে বসে ঘানি টানুক। সেটাই হবে এদের উচিৎ শাস্তি। হতভাগার দল!’
তাই হল। ফরেস্ট অফিসার এদের দেখেই বললে, ‘রাজা বাহাদুর, অনেক দিন থেকেই আমরা এদের ধরার চেষ্টা করছি। আজ আপনাদের জন্যই তা সম্ভব হল। এবার দেখুন, এ ব্যাটাদের কি হাল করি!’
‘সে তো ঠিক বাত হ্যায় স্যার।’ জাম্বু ভালুক বললে, ‘এই তো দু-দিন আগে দেহরাদুনে দুজন চোরা শিকারী ধরা পড়ল। তাদের কাছ থেকে তিনটে হাতির দাঁত পাওয়া গেল। অথচ উত্তরাখণ্ডের কোন বনবিভাগ থেকেই কোন হাতি মারা যাওয়ার রিপোর্ট তো হয়নি। তা কী করে সম্ভব? আপনিই বলুন।’
অফিসার মাথা নিচু করে বললেন, ‘কী আর বলব ভাই, দেশে মীরজাফরের কী আর অভাব আছে?’
যাই হোক, সেই বদমাইশগুলোর ঠাঁই হল শ্রীঘরে।
ছুটন্ত বাঘ আর উড়ন্ত বাঘের খবরটা তোমরা নিশ্চয়ই খবরের কাগজে পড়েছ? কিন্তু সে রাত্রে কুস্তল গড়ের বনে যে বনভোজনের আয়োজন হয়েছিল তার মেনুতে কী কী ছিল সে খবর কি রাখো? সে সব জানতে গেলে জয়পুর, যোধপুরে এসে পেঁয়াজ কচুরি, মুগের ডালের কচুরি আর মিরচি বড়া খেয়ে দেখতে হবে। শেষ পাতে অবিশ্যি ওখানকার মেওয়া বরফি আর পুস্করের মালপো থাকা চাই।
(জয় গুলেশ্বরী দেবী! জেব্রা যেমন ভারতীয় জন্তু নয় তেমনি সিংহও রাজস্থানে পাওয়া যায় না। কিন্তু দোহাই, গল্পের খাতিরে এই ‘গুলগুলো’ ক্ষমা ঘেন্না করে দিও।)