ছোটদের কথা
ছোটদের কথা
স্নেহের ছোট্ট বন্ধুরা,
দেখতে দেখতে এক দীর্ঘ বর্ষার শেষে ঋতু রানী শরৎ আমাদের দুয়ারে উপস্থিত। যদিও এই প্রবল বিশ্ব উষ্ণায়ণের যুগে আজ আমরা আর শরৎ এলেই মনের আন¨ বলে উঠতে পারি না, এসেছে শরৎ হিমের পরশ লেগেছে হাওয়ার পরে, সকাল বেলায় ঘাসের আগায় শিশিরের রেখা ধরে... কোথায় এখন হিম, কোথায়ই বা শিশিরের ছোঁয়া! ছোট্ট বন্ধুরা তোমরা খেয়াল করেছ কিনা জানি না বিগত বেশ কয়েকটি বছর ধরে বর্ষাকালেই আকাশ জুড়ে চলতে থাকে পেঁজা তুলোর মতো শরতের সাদা মেঘের আনাগোনা। তারপর যেই শরৎ আসে মহালয়ার মহিষাসুরমর্দিনীর সুরে দেবী দুর্গার আবাহনী বেজে ওঠে... মাতলো রে ভুবন, বাজলো, বাজলো তোমার আলোর বেণু, আমরা প্রস্তুতি নিতে থাকি আমাদের বারো মাসে তেরো পার্বণের শ্রেষ্ঠ পার্বণ শারদোৎসবে মেতে ওঠার জন্য, মন্ডপে মন্ডপে চলতে থাকে দেবী বরণের শেষ মুহূর্তের ব্যস্ত আয়োজন, ঠিক তখনই যেন সব আন¨ের ওপর জল ঢালবার জন্য কোথা থেকে এসে হাজির হয় মুখ ভার করা নিম্নচাপ! কখনো ছিঁচকাঁদুনে বৃষ্টি, কখনো মুষলধারে বৃষ্টি, কখনো বা বন্যার দাপটে ঘরবাড়ি ভেসে গিয়ে কত কত মানুষের দুর্ভোগের সীমা থাকে না!
তবে শুধুমাত্র প্রাকৃতিক দুর্যোগই নয়, তোমরা যারা শৈশব থেকে কৈশোরের দিকে পা রাখতে চলেছ, তোমরা নিশ্চয়ই টেলিভিশন, খবরের কাগজ, বাড়িতে বড়োদের আলোচনা, এই সবকিছু থেকে কিছুটা আঁচ করতে পারছ যে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে সাথে এই মুহূর্তে আমরা অনেকগুলি গুরুতর সামাজিক দুর্যোগের মধ্যে দিয়ে পথ চলেছি। আমাদের রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য পরিষেবা, আমাদের সামাজিক নিরাপত্তা, আমাদের আইনি অধিকার সবকিছুই এখন একটা টালমাটাল অবস্থার মধ্যে দিয়ে চলছে। তোমরা যারা বড়ো হচছ, তোমাদের জন্য আমরা বড়োই উৎকণ্ঠিত, একটা সুস্থ সু¨র পরিবেশ তোমাদের জন্য আমরা রেখে যেতে পারব তো! তোমরা তো জানো এই বছর হল কবি সুকান্তের জন্ম শতবর্ষ। সেই কবে তিনি বলে গিয়েছিলেন, এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার। তিনি চলে গেছেন বড় অসময়ে, কিন্তু আমরা সেই অঙ্গীকারের কতটুকু বয়ে নিয়ে যেতে পারছি! তোমাদের চারপাশে এখন অনেক প্রতিকূলতা। সেই প্রতিকূলতার জন্য বহু ছেলে মেয়ে শৈশবেই লেখাপড়া ছেড়ে ßুñলছুট হয়ে হারিয়ে যাচেছ সংসারের নানা জটিল আবর্তে। নানা কারণে পরিবারের আর্থিক অনিশ্চয়তা কেড়ে নিচেছ শৈশব, কৈশোরের নির্ভেজাল আন¨টুকু।
তবে এরই মধ্যে আমরা উপস্থিত হয়েছি শারদোৎসবের দোর গোড়ায়। আন¨ অবশ্যই করবে, কারণ বছরের এই কটা দিন তোমাদের বাঁধা ধরা রুটিনের পিছনে দৌড়ের হাত থেকে একটু অবসর মেলে। কিন্তু সেই সঙ্গে তোমরা সেই সব না দেখা, না চেনা বন্ধুদের কথাও একটু মনের মধ্যে রেখো যাদের ঘরে এই উৎসবের দিনগুলিতেও আলো জ্বলবে না, নতুন জামা জুতোর গন্ধে যাদের বুক ভরে উঠবে না, পুজোর সময় মন্ডপে মন্ডপে ঘুরতে ঘুরতে পথরে পাশে লোভনীয় সব খাবারের স্টলে বা রেস্টুরেন্টে রকমারি মুখরোচক খাবার যাদের কাছে শুধুই দূর থেকে দেখার! আন¨ের মধ্যেও তাদের জন্য তোমাদের মনটা যেন একটু কাঁদে। সেই সঙ্গে এটাও খেয়াল রাখবে, তোমাদের আন¨ যেন অন্যের নিরান¨ের কারণ না হয়ে ওঠে।
এই মনটিকে তৈরি করতে পারলে তবেই তোমরা প্রত্যেকে হয়ে উঠবে মান এবং হুঁশ নিয়ে একেক জন প্রকৃত মানুষ। আর সেই দিন তোমাদের মনের আলোয় আমাদের চারপাশের অন্ধকার গুলো দূর হয়ে যাবে। আমরা সবাই আবার প্রাণ খুলে বলে উঠতে পারব... যেদিকে তাকাই সোনার আলোয় দেখি যে ছুটির ছবি, পূজার ফুলের বনে ওঠে ঐ পূজার দিনের রবি।
ইতি—
তোমাদের সম্পাদিকা বন্ধু
বিপাশা চট্টোপাধ্যায়