ছোটদের কথা
ছোটদের কথা
ড়ির সকলে সেজদা মানে সেজকাকাকে নিয়ে কেন যে মজা করে মিতুল বুঝতে পারে না। সেজকাকাকে শুধু মিতুল নয় পাড়ায়— ঘরে সকলেই সেজদা বলে। সকলের ডাক শুনতে শুনতে মিতুলের কাছেও শিবনাথ অর্থাৎ সেজকাকা কখন যেন সেজদা হয়ে গেছে। তা এই সেজদাকে মিতুলের বেশ ভালো লাগে। সেজদা মিতুলকে কোনো সময়েই বকে না বা পড়তে বসতে বলে না। বরং ওকে সাথে নিয়ে ঘুড়ি ওড়ায়। ছিপ ফেলে মাছ ধরে। সাইকেলে বসিয়ে বেড়াতে নিয়ে যায়। খেলার মাঠে নিয়ে যায়। চকোলেট দেয়। বরং বলা যায় সেজদা মিতুলের খেলার বা বেড়ানোর সাথী।
হ্যাঁ এটা ঠিক যে সেজদা একটু খেতে ভালোবাসে। আর একটু খামখেয়ালিও আছে। সেজদার মাথায় কখন যে কী চাড়া দেয় তা বোধহয় নিজেও জানেনা। এইতো কিছুদিন আগে সেজদার মাথায় হঠাৎ শখ চাপল গায়ক হবার। দিনকয়েক পরেই সেজদাকে হারমনিয়াম ঘাড়ে করে বাড়ি ঢুকতে দেখা গেল। শুরু হল সেজদার রেওয়াজ। সকাল বিকাল অনুশীলনে কোনো খামতি নেই। আর নতুন হারমনিয়ামে একটু পোঁ পাঁ করার লোভে মিতুলও ছায়ার মতো লেগে আছে সেজদার সাথে। সেজদার এই কঠোর অনুশীলন বা সাধনায় বাড়ির ও পাড়ার বেরসিক লোকজনের যখন কান ঝালাপালা, তখন মিতুলের বাবা একদিন সেজদাকে ডেকে বললেন, ‘হ্যাঁ রে শিবু তোর জন্য কী আমরা পাড়ার লোকের কাছে মারধর খাব না পাড়া ছেড়ে চলে যাব?’ সেজদা যেন আকাশ থেকে পড়ল। একেবারে নিরীহ গোবেচারার মতো বলল, ‘কেন মেজদা আমি আবার কী করলাম?’ মিতুলের বাবা বললেন, ‘না না তুই কিছু করিসনি। আসলে আমরা তো বেরসিক তাই তোর সাধনার ঠিক দাম দিতে পারছি না। তুই বরং কাল থেকে নীরবে রেওয়াজ কর।’ মিতুলের বাবার কথায় সেজদা কী বুঝল কে জানে! পরদিন থেকে সেজদার গায়ক হবার শখ বিদায় নিল।
আর খাওয়ার বিষয়ে সেজদার লোভের কথা বাড়ির সবাই জানে। এমন কী মিতুলও। বেশ কয়েকবার রান্নাঘর থেকে খাবার চুরি করতে গিয়ে ধরাও পড়েছে সেজদা। একবার তো ঠাকুমা সবার সামনেই বলেছিল, ‘না শিবু তোকে নিয়ে আর পারা যায় না। এক-এক সময় মনে হয় তুই বোধহয় মিতুলের চেয়েও ছোটো!’ ঠাকুমার কথায় সেজদা মিনমিন করে বলল, ‘কী করব বলো? ভালো খাবার দেখলে যে আমার মাথার ঠিক থাকে না।’
তা সেদিন হয়েছে কী, বিকালে চায়ের সাথে একটা করে অমলেট দেওয়া হয়েছে। সেজদা অমলেট শেষ করে পারলে ডিশটাও খেয়ে ফেলে। হঠাৎ সেজদার খেয়াল হল পায়ের কাছে যেন অমলেটের পিঁয়াজের একটা টুকরো পড়ে আছে। এপাশ ওপাশ একটু দেখে নিয়ে মাটি থেকে পিঁয়াজের টুকরোটা তুলে নিয়ে সোজা মুখে। আর তারপরই সেজদার জিভ বের করে আ-আ করে নাচ। সেজদার মুখে চালান করা পিঁয়াজের টুকরোটা ছিল আসলে আধখানা ধানি লংকা। সেজদার অবস্থা দেখে ঠাকুমা শুধু বললেন, ‘দেখা যাক, এবার যদি শিবু বড়ো হয়।’