ছোটোদের কথা
ছোটোদের কথা
গ্রামের নাম পলাশডাঙা, সেখানে বাস করত এক ভক্তিমান আর স্বর্গে যাত্রার জন্য খুব আগ্রহী হরিহর নামের এক বণিক। সে একদিন সন্ধ্যাবেলা ঠাকুর ঘরে দেখতে পেল এক সন্ন্যাসীকে, সন্ন্যাসী তাকে একটি বর চাইতে বললেন। তখন হরিহর বলল, ‘বাবা আমি যেন মৃত্যুর পর স্বর্গে যেতে পারি, এই বর দিন।’ তখন সন্ন্যাসী তাকে তিনটি শর্ত পালন করতে বললেন—
এক— কাঁটার পথ অতিক্রম করা।
দুই— অসৎপথে না চলা।
আর, তিন— দয়ালু হওয়া।
সন্ন্যাসী তাকে প্রথমে নিয়ে গেলেন কাঁটার পথে। হরিহর সেখানে পৌঁছে দেখল এ-তো সত্যিকারের গাছের বা মাছের কাঁটা নয়, এ-তো অনেক মানুষের সমহার। কিছুদিন সেখানে সে শান্তিতে থাকল। কিন্তু তার পর একদিন ঘটল এক ভয়ানক ঘটনা। সে হেঁটে চলেছিল মাঠের মধ্যে দিয়ে, হঠাৎ তাকে ঘিরে দাঁড়াল একদল লম্বা গোঁফওয়ালা পালোয়ান। হরিহরের হাতে ছিল একটা পুঁটুলি আর তাতে ছিল কিছু মুদ্রা আর ছিল কাঁচা আম, আর নুন-লঙ্কার গুঁড়ো। তার পুঁটুলি নেওয়ার জন্য পালোয়ানরা তাকে যেই ধরতে গেল, সে তখনই পুুঁটুলি থেকে লঙ্কাগুড়ো নিয়ে তাদের চোখে ছুঁড়ে দিয়েই দৌড় দিল। এসে থামল এক নদীর ধারে।
আবার সেখানে দেখল একটা ছোট্ট ছেলে খুব কাঁদছে। কিন্তু তার পিছনে আসছে একটা সাপ। সে তখন ছেলেটিকে নিয়ে আবার দৌড় দিল। রাস্তায় ছেলেটির বাবা মা হরিহরকে দেখে ভাবল ছেলেধরা, তাদের ছেলেকে চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। তাই আশেপাশের লোক ডেকে তাকে মারতে লাগল। কিন্তু হরিহর যখন ঘটনাটা বলল, তখন সবাই তাকে আদর আপ্যায়ন করতে লাগল।
এই ঘটনা দেখে সন্ন্যাসী হরিহরকে নিয়ে গেলেন এক গ্রামে। গ্রামটা নামেই গোলাপনগর কিন্তু সেখানে অনাবৃষ্টির কারণে গোলাপের মতো ছোট্ট ছোট্ট শিশুগুলো অনাহারে মরে। তাই গোলাপের সৌন্দর্য সেই গ্রামে আর নেই। হরিহর গিয়ে উপস্থিত হল পান্তা নামে এক চাষির বাড়িতে। চাষি খেতে পাক আর না পাক, তার যা সামগ্রী ছিল তাই দিয়ে অতিথি হিসাবে আশ্রিত হরিহরকে সেবা করল। কিন্তু চাষির এই কাণ্ড দেখে হরিহর তাকে কিছু মুদ্রা দিয়ে বলল জমিতে আল তৈরি করে নদীর জল আনো। পান্তার সঙ্গে এই কাজে রাজি হল গ্রামের অধিকাংশ চাষি। তারা নদীতে বাঁধ তৈরি করে নদীর জল জমিতে আনল। তারপর ধীরে ধীরে জমিতে হল সোনার ফসল, পুকুরের পাড়ে ফুটল অনেক ফুল আর শিশুদের মুখে ফুটল গোলাপের মত হাসি। হরিহর তখন বুঝল, মরে গিয়ে কি স্বর্গ ভোগ করব! মানুষের মধ্যে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে, তাদের উপকার করে যে আনন্দ পেয়েছি, তারা যে আমাকে পাশে চায়— এমন সুখের পৃথিবীর থেকে স্বর্গ কি আর ভালো হতে পারে? এইভাবেই হরিহর লাভ করল মহাবিশ্বের মহান স্বর্গ।