ওই যে কারা আসতেছে ডাক না ছেড়ে
তপোময় ঘোষ
রবিঠাকুরের বীরপুরুষের শিশু বীর পুরুষটি ও তার মায়ের সামনে যে বিপদ হাজির হয়েছিল, তাদের ছিল হাতে লাঠি মাথায় ঝাঁকড়া চুল, কানে তাদের গোঁজা জবার ফুল আর কণ্ঠে ছিল ‘‘হা রে রে রে রে’’ শব্দের ভয়ঙ্কর আওয়াজ। পালকিতে সুরক্ষিত মা এবং তার বীরপুরুষ শিশু সন্তানটির সামনে ভয়ঙ্কর বিপদস্বরূপ এক ডাকাতদল উপস্থিত হয়েছিল। কিন্তু আজকের এই বিংশ শতাব্দীতে আমাদের পৃথিবীবাসী সকল শিশু ও তাদের মায়েদের সামনে যে বিপদ আসছে তাদের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে না, শুধু মর্মে মর্মে অনুভব করা যাচ্ছে। তাদের আগমন আর তার ভয়ঙ্করতা! আজকের সেই ডাকাত দলে আছে জলবায়ুর ভীষণ দর্শনা রূপ এদের নাম সাইক্লোন, সুপার সাইক্লোন, সুনামি, ভূমিকম্প, ভূমিধ্বস, আকাশভাঙ্গা বৃষ্টি, চরম তাপপ্রবাহ, চরম শৈত্যপ্রবাহ, অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি ইত্যাদি।
হ্যাঁ, আমাদের পৃথিবীর জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তনের ফলে ইতোমধ্যেই যে মানবসভ্যতার প্রচণ্ড ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে তা আর নতুন করে বলার দরকার নেই। নতুন যেটা বলার তা হল, বিপদ যে গতিতে আসার কথা ছিল, তার থেকে বহুত বেগে আমাদের এই সভ্যতার দিকে ধাবিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে পৃথিবীপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা শিল্পবিপ্লবের আগের গড় তাপমাত্রার চেয়ে ২-৩ ডিগ্রী বেড়ে গেছে। ফলে মেরুপ্রদেশের হিমবাহ গলনের আশঙ্কা অনেক বেশি বেড়ে গেছে। এই বরফ গলনের ফলে সমুদ্র ভিজে আরও ফুলে উঠবে এবং ফলত আমরা ডাঙাতেও ভেসে যাবো। তারই পূর্বাভাস এই এখনই অতিবৃষ্টি এবং অনাবৃষ্টি। কিন্তু যেহেতু বীরপুরুষের সামনে সেই তথাকথিত ডাকাত দলের মতো এই অ-মূর্তিমান ডাকাতের গলায় ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি শব্দ গর্জন হা রে রে রে রে নেই তাই আমরা পালকির দরজা দুটোর ফাঁক বন্ধ করে নিশ্চিন্তে আছি। কিন্তু আর বোধহয় নিশ্চিন্তে বসা ঠিক হবে না। দ্রুত প্রস্তুত হয়ে বীরপুরুষের মতো ডাকাত মোকাবিলায় নামতে হবে। বীরপুরুষের খোকাটির হাতে তবু একটি তলোয়ার ছিল কিন্তু আমরা তো আক্ষরিক অর্থেই নিধিরাম সর্দার।
তবুও বিজ্ঞানীদের মতে আপাতত আট দফা কর্মসূচী রূপায়ণের চেষ্টা চালানোই হবে নিধিরামদের ন্যূনতম সামান্য মন বোঝানো ঢাল।
১। জীবাশ্ম-জ্বালানি মাটির নিচেই থাকুক : পৃথিবী উষ্ণায়নের অন্যতম প্রধানতম কারণ জীবাশ্ম জ্বালানির দহন। হ্যাঁ হাইড্রোকার্বনই প্রধানতম ভিলেন। হাইড্রোকার্বন অর্থাৎ কয়লা— পেট্রোলিয়ামজাত তেল পুড়িয়ে যানবাহন চলানো কমাতে হবে। বৈদ্যুতিক যানবাহন বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে সাইকেল এবং পদব্রজেও যাতায়াত করতে হতে পারে।
২। সুস্থায়ী শক্তিতে বিনিয়োগ কর : জীবাশ্ম জ্বালানী পরিহার করতে হবে। বিকল্প হিসেবে অপ্রচলিত শক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। বাতাস বা সমুদ্রের ঢেউ সূর্যালোক ইত্যাদি অপ্রচলিত ও অফুরন্ত উৎস হোক বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে এবং ব্যবহার করতে হবে। আমাজন-এর মতো বন ও প্রাকৃতিক পরিবেশ বাঁচাতে হবে। আরও অনেক গাছ লাগাতে হবে। বর্তমানের এই রাসায়নিক সার বিষ দেওয়া কৃষির বদলে প্রাকৃতিক কৃষি বা স্বাভাবিক কৃষিতে অভ্যস্ত হতে হবে। মাংস উৎপাদন বাদ দিয়ে মানুষকে শাকাহারি হতে হবে। তবে বিশ্ব উষ্ণায়ন কমবে।