ছোটোদের কথা
ছোটোদের কথা
পাহাড়ের পায়ের কাছে বিরাট এক ঘন বন। সেই বনের শেষ যে কোথায় কেউ জানেনা। অনেকরকম জন্তুজানোয়ারের বাস সেই বনে। সেখানে আছে বাঘ, হাতি, ভালুক, শিয়াল, হরিণ, বানর আরও অনেক অনেক জন্তু। সেই বনের মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে বিরাট এক নদী। সেই নদীতে আছে অনেক রকম মাছ আর কুমির। সেই বনে সবাই মিলেমিশে থাকে মহা আনন্দে।
সেখানে বনের হরিণের সঙ্গে এক বানরের খুব বন্ধুত্ব। বানর গাছের ডালে বসে বসেই হরিণের সঙ্গে গল্প করে। হরিণ যেমন দারুণ জোরে ছুটতে পারে, বানর তেমনি লাফিয়ে লাফিয়ে এগাছ ওগাছ করে বনের নানান জায়গায় ঘুরে ঘুরে বেড়ায়। আর বন্ধু হরিণকে খবর দেয় বনের কোনদিকে ভালো ঘাস আছে। হরিণ যখন নতুন জায়গায় গিয়ে ঘাস খায়, তখন বানর গাছের ডালে বসে ফল খেতে খেতে গল্প করে আর চারিদিকে নজর রাখে। আসলে গাছের ওপর থেকে অনেক দূর পর্যন্ত নজর যায়। তাই কোনো বিপদের আঁচ পেলেই বন্ধু হরিণকে সে সাবধান করে দেয়।
এভাবেই দুই বন্ধুর বেশ আনন্দে দিন কেটে যায়। একদিন হরিণ তার একদম ছোট্ট বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে এসে বনে ঘাস খাচ্ছে আর গাছের ডালে বসা বন্ধু বানরের সঙ্গে গল্প করছে। এমন সময় হঠাৎ সারা বন যেন কেঁপে উঠল বাঘের গর্জনে। বানর সঙ্গে সঙ্গে গাছের মগডালে উঠে দেখল কোথায় আছে বাঘটা। সে সেখান থেকেই চেঁচিয়ে বন্ধুকে সাবধান করল। হরিণ বলল, ‘বন্ধু আমি না হয় ছুটতে পারব। কিন্তু আমার এই বাচ্চা সবে হয়েছে। সে তো ছুটতে পারবে না। কী হবে বন্ধু?’ বানর বলল, ‘শোনো বন্ধু যদি তুমি বাঁচতে চাও তবে তোমাকে পালাতেই হবে।’ হরিণ তখন বানরকে বলল, ‘কিন্তু বাচ্চাকে ফেলে আমি কিভাবে যাব? বুঝতে পারছি বন্ধু আজ আর আমাদের বাঁচার কোনো উপায় নেই।’ হরিণের অবস্থাটা বানরও বুঝতে পারছে। কিন্তু সে বন্ধুকে বাঁচাতে মরিয়া। তাই বলল, ‘বন্ধু তুমি এক কাজ করো। বাচ্চাটাকে এখানে রেখেই তুমি পালাও। তোমরা এভাবে থাকলে দুজনেই মরবে। তার চেয়ে তুমি যাও। আমি দেখছি বাচ্চাটাকে কিভাবে বাঁচানো যায়।’ হরিণ তবু যাচ্ছে না দেখে বানর বলল, ‘তার মানে বুঝতে পারছি বন্ধু আমার ওপর তোমার বিশ্বাস নেই।’ বানরের কথায় হরিণ বলল, ‘তুমি আমায় ভুল বুঝোনা বন্ধু। বাচ্চাকে ছেড়ে যেতে আমার যে পা নড়ছে না।’ বানর এবার রেগে গিয়ে বলল, ‘তবে তোমরা দুজনেই মরো। আমি চললাম।’ এই বলে বানর যেই যাবার জন্যে ঘুরছে সঙ্গে সঙ্গে হরিণ প্রায় কেঁদে ফেলে বলল, ‘বেশ! তাহলে আমি চললাম। বাচ্চাটা তোমার ভরসাতেই রইল।’ একথা বলে হরিণ কাঁদতে কাঁদতে একাই সেখান থেকে চলে গেল।
হরিণ চলে যাবার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সেখানে হাজির হল বিরাট এক বাঘ। আর বাঘটা এসেই হরিণের বাচ্চাটাকে মুখে করে নিয়ে চলতে লাগল বনের পথে। বানরও গাছে গাছে লাফিয়ে লাফিয়ে চলল বাঘের পিছু পিছু। তার খালি মনে হত লাগল বন্ধু হরিণের কথা। তাকে সে কী বলবে!
বানর হঠাৎ খেয়াল করে দেখল বাঘটা বনের মধ্যে খোলামেলা একটা জায়গায় এসে হরিণের বাচ্চাটাকে মুখ থেকে নামিয়ে দিয়ে তার সারা গা চেটে দিচ্ছে। আর একটু দূরেই গোটা দুয়েক বাঘের বাচ্চা খেলা করছে। বানর বুঝল এটাই বাঘের থাকার জায়গা। এবং এ বাঘ নয়। বাঘিনী। আর বাঘিনী বলেই সে পরম মমতায় হরিণের বাচ্চাটাকে আদর করছে। বানরের খুব আন¨ হল। সে তখনই গাছে গাছে লাফিয়ে লাফিয়ে চলল বন্ধু হরিণের কাছে। তার বাচ্চার ভালো থাকার খবর দিতে।